বান্দরবানে বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধস, অনেক এলাকা প্লাবিত

কয়েক দিন টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানে সরকারি ভবনসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

উসিথোয়াই মারমা বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2021, 01:08 PM
Updated : 29 July 2021, 02:11 PM

বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলা শহরে পৌর এলাকা, আলীকদম সদর এবং লামা পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ পরিবার। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

লামা পৌর এলাকায় টানা বৃষ্টিতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি

বৃহস্পতিবার বিকালে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা রশীদ জানিয়েছেন, তার সরকারি বাসভবনসহ লামা পৌর এলাকার সরকারি বিভিন্ন অফিস, দোকানপাট এবং বসতঘর ডুবে গেছে।

তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপজেলা পরিষদ ভবন, থানা ভবন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অফিস, সমাজসেবা কার্যালয় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অফিসগুলোর নিচতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে।

“পানি উঠে এলাকার এখন সিরিয়াস অবস্থা। পৌর এলাকা প্রায় ৩শ’ পরিবার পানিবন্দী হয়ে কোথাও বের হতে পারছে না।

বান্দরবান জেলা শহরে ওয়াপদা সেতু এলাকা

“ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। তবে ঠিক কত পরিবার পানিবন্দী এবং কত জন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে এ মূর্হুতে সঠিক হিসাব বলা যাচ্ছে না।”

জনপ্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে রেজা রশীদ আরও জানান, অনেক জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। জনপ্রতিনিধিরা বাড়িঘর ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলার অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কে ক্ষতি হলেও মূল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।

পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার এবং পানিবন্দী মানুষদের জন্য পৌর এলাকার সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানান তিনি।

লামা পৌর এলাকায় টানা বৃষ্টিতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি

বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকটি জেলার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরে নিম্নাঞ্চল বালাঘাটা, পুল পাড়া, কাশেম পাড়া, মেম্বার পাড়া, আর্মি পাড়া, হাফেজ ঘোনা এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়রা।

বালাঘাটার এলাকার বাসিন্দা কামরুন নাহার এবং আল আমিন জানান, ঘরে পানি উঠে অনেক জিনিস নষ্ট হয়েছে। হালকা কিছু মালামাল বের করতে পেরেছেন তারা। ঘরে পানি ওঠায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।

লামা পৌর এলাকায় টানা বৃষ্টিতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি

সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকা উজানী পাড়ার বাসিন্দা সামাচিং মারমা এবং হ্লামাউ মারমা জানান, উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে আছে। আপাতত বৃষ্টি কমলেও উজান থেকে আসা পানির ঢল কমছে না। বাধ্য হয়ে কয়েকদিন স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়ে থাকতে হবে।

এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কোনো ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

লামা পৌর এলাকায় টানা বৃষ্টিতে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জেলায় ১৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবান সদর পৌরসভায় রয়েছে ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র। ইতিমধ্যে শহরে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।  এছাড়া পৌরসভার ৮শ’ পরিবার আশপাশে তাদের স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

“উপজেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যে ৪শটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য খাবার এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বিভাগকে দেখভাল করতে বলা হয়েছে।”

বান্দরবান জেলা শহরে ওয়াপদা সেতু এলাকা

সাতটি উপজেলার প্রতিটি জায়গায় কিছু না কিছু প্লাবিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক আরও জানান, তার মধ্যে লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান পৌর এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে। কোথাও জানমালের ক্ষতি না হলেও আলীকদম উপজেলায় কৃষিজমির ফসল নষ্ট হওয়ার খবর পেয়েছি।

তবে আর ভারী বৃষ্টি না হলে দুয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আশা দেখছেন তিনি।

বান্দরবান জেলা শহরে সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকায় উজানের পানি ঢলে ডুবে যাওয়া ঘর

এদিকে জেলা মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবান জেলায় ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এ বছরের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাত।

তবে দুই বছর আগে ২০০ মিলিমিটারেও বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড রয়েছে বলে জানান তিনি।