গোপালগঞ্জ হাসপাতালের এমআরআই, স্ক্যান ও এক্স-রে মেশিন অকেজো

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন অকোজো পড়ে রয়েছে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2021, 11:45 AM
Updated : 28 July 2021, 11:45 AM

এতে রোগীরা সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত স্বল্পমূল্যের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি টাকা ব্যয় করে রোগীদের খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল থেকে এ সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। 

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে এসব মেশিন স্থাপনে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের নজরানা চৌধুরী বলেন, ২ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে সব ধরনের সিটি স্ক্যান  এখান থেকে করোনো সম্ভব ছিল। মেশিন নষ্ট থাকায় খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল থেকে এ পরীক্ষা করাতে ৪  থেকে ৫ গুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর জরুরি ক্ষেত্রে খরচ আরও বাড়ে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হারিদাসপুর গ্রামের বিমল টিকাদার বলেন, ৩ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে হাসপাতাল থেকে এমআরআই-র সব পরীক্ষা করোনো যায়। কিন্তু ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি ইমেজিং সেন্টারে এ পরীক্ষায় ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়।

সদর উপজেলা চন্দ্রদিঘলিয়া  গ্রামে গৃহবধূ আদরী খানম (৪২) বলেন, “পড়ে গিয়ে আমার বাম পায়ে তিন দিন আগে হাতে চোট  লেগেছে। ডাক্তার আমাকে এক্স-রে করতে বলেছেন। দুদিন ধরে হাসপাতালে এসে এক্স-রে করাতে পারিনি। বাধ্য হয়ে বাইরের ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে ৮শ টাকা দিয়ে এক্স-রে করিয়েছি। এই এক্স-রে হাসপাতালে মাত্র ১৫০ টাকায় করাতে পারতাম।”

গোপালগঞ্জ আড়াইশ বেড জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, ২০১৫ সালে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে একটি এমআরআই মেশিন বসানো হয়। মেশিনটি ৬ মাস চলার পর হিলিয়াম গ্যাস শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে মেশিনটি ৬ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৩ সালের ৫ মে  হাসপাতালে ১০ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১টি সিটি স্ক্যান মেশিন ও ২০১৪ সালের ২৯ মে ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়।

“যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যান মেশিন ও সফটওয়্যার নষ্ট হয়ে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন ৬ মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে।”

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, সিটি স্ক্যান মেশিনটি মেরামতের জন্য বার বার ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারকে (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও অবহিত করেছেন।

সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল সিটি স্ক্যান মেশিন মেরামতের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়; ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিটি স্ক্যান মেশিন মেরামতের কার্যাদেশের অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, “সরবরহের কিছুদিন পরেই এক্স-রে মেশিনের সফটওয়্যার নষ্ট হয়ে যায়। ৬ মাস আগে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে এনে সফটওয়্যার ঠিক করলেও কিছুদিনের মধ্যে তা পুনরায় নষ্ট হয়ে যায়। ”

নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ডিজাটাল এক্স-রে মেশিন অকেজো থাকায় মোবাইল (রিচার্জেবল) এক্স-রে মেশিন দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ১০ থেকে ১৫টি এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী এক্স-রে করাতে আসেন। অধিকাংশ রোগীরা এক্স-রে না করতে পেরে বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে উচ্চমূল্যে এক্স-রে করছে। এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করতে তাদের ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল যেতে হচ্ছে।