কক্সবাজারে বৃষ্টি ও পাহাড় ধসে রোহিঙ্গাসহ আট জনের মৃত্যু

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরসহ উখিয়া, টেকনাফ এবং মহেশখালীতে বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে, পানিতে ভেসে গিয়ে এবং দেওয়াল চাপায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2021, 01:07 PM
Updated : 27 July 2021, 01:07 PM

মঙ্গলবার সকালে ও দুপুরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ১০ নম্বর ও ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা এলাকা এবং মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহীর পাড়ায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

এতে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ৪ শিশুসহ ৬ জনের, টেকনাফে এক বৃদ্ধের এবং মহেশখালীতে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন, উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের জি-৩৭ ব্লকের বাসিন্দা শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তার ছেলে শফিউল আলম (৯), একই ক্যাম্পের জি-৩৮ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৫), তার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা (১), ছেলে আব্দুর রহমান (২), টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা এলাকার আলী আহমদের ছেলে রকিম আলী (৫৫) এবং মহেলখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহী পাড়ার আনসার হোসেনের মেয়ে মোর্শেদা বেগম (১৭)।

আহতরা হল, উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের জি-৩৭ ব্লকের বাসিন্দা শাহ আলমের ছেলে জানে আলম (৮) এবং মেয়ে নুর ফাতেমা (১০)।

তবে উখিয়ার ১৮ নম্বর শরণার্থী শিবিরে খালে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়া রোহিঙ্গার শিশুর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন।

সামছু-দৌজা বলেন, “দুপুরে উখিয়ার ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ের ঢালের নিচের ২ থেকে ৩টি বসতির উপর মাটি ধসে পড়ে। এতে দুইটি পরিবারের ৩ শিশুসহ ৫ জন ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং আহত হয় ২ জন।

“খবর পেয়ে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি চাপা অবস্থায় ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ সময় আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করে।”

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আরও বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় থেমে থেমে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে খাল ও ছড়ায় ব্যাপক পানির ঢলের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়ার ১৮ নম্বর শরণার্থী শিবির সংলগ্ন খালে পাহাড়ি ঢলের পানিতে খেলতে নামে কয়েকজন রোহিঙ্গা শিশু। এ সময় ‘স্রোতের টানে ভেসে যায় এক শিশু’। পরে কিছুদূর থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা বলেন তিনি।

অন্যদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে রকিম আলী নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহামুদুল হাসান।

স্থানীয়দের বরাতে এসআই মাহামুদুল বলেন, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মনিরঘোনায় এলাকায় পাহাড়ি খাদের নিচে বাড়ির উঠানে বসে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এ বৃদ্ধ। এ সময় পাহাড় ধসের ঘটনায় মাটি চাপা পড়ে ২ জন।

“পরিবারের স্বজনরা একজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তবে মাটি সরিয়ে রকিম আলীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।”

গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে মঙ্গলবার পাহাড় ধস ঘটেছে বলে জানান এসআই মাহামুদুল।

এছাড়া মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মাহফুজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মহেলখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের উত্তর সিপাহী পাড়ায় ভারী বৃষ্টিপাতে বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসে মোর্শেদা বেগমের মৃত্যু হয়েছে।

ইউএনও মাহফুজুর বলেন, মঙ্গলবার সকালে মহেশখালীর উত্তর সিপাহী পাড়ায় অব্যাহত ভারী বর্ষণে একটি বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে। এতে বাড়িতে থাকা ২ থেকে ৩ জন চাপা পড়ে।

“তাৎক্ষণিক মাটির দেওয়াল সরিয়ে অন্যদের জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও মোর্শেদা বেগমকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।”

ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ইউএনও মাহফুজুর।