ভোটে জিতে প্রতিপক্ষকে পেটানোর অভিযোগ আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে

বরগুনায় এক আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ‘ভোট না দেওয়ার’ জেরে প্রতিপক্ষের এক যুবককে পিটিয়ে জখম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2021, 03:54 PM
Updated : 26 July 2021, 03:54 PM

সোমবার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বাসিন্দা অসীম চন্দ্র শীল বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।

পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে পেটানো হয় এবং ভয়ে মামলা করতে ও চিকিৎসা নিতে পারছেন না বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।

তবে রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে থানায় অভিযোগ নিয়ে কেউ যায়নি বলে বামনা থানা পুলিশের ভাষ্য।

গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অসীম চন্দ্র শীল বলেন, রামনা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। রাজধানী ঢাকায় একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করেন। তার দরিদ্র বাবা বিমল চন্দ্র শীল স্থানীয় বৈকালিন বাজারের একজন ক্ষুদ্র চায়ের দোকানি। করোনা মাহামারীর কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসেন অসীম।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নির্বাচনে জয়ী হয়ে নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে অসীমের পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন।

অসীম চন্দ্র শীলের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নেতা হওয়ায় এবং তার বিশাল ক্যাডার বাহিনী থাকায় ভীত হয়ে চলতি মাসের ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বৈকালিন বাজারে গিয়ে ‘ভুল ত্রুটি’ হলে ক্ষমা চাইতে নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে যান অসীম চন্দ্র শীল।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য অসীমকে ক্রিকেটের শক্ত স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ সময় স্থানীয় প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম উজ্জল ও ফকরুল ইসলাম কমল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও বেদম মারধর করে ‘হাত ভেঙে’ দেয় তারা।

এ ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে বামনা থানার ওসি মো. বশিরুল আলম ঘটনাস্থলে আসেন বলে জানান অসীম।

পরে মাথায় রক্তাক্ত জখম নিয়ে অসীম স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে ধরে এনে চেয়ারম্যান নজরুল নিজে লোহার পাইপ দিয়ে আবার বেদমভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন বলেও অসীমের অভিযোগ।

এ সময় এসআই সিদ্দিক ঘটনাস্থলে এবং ওসি বশিরুল আলম ঘটনাস্থল থেকে অল্প কিছু দূরে উপস্থিত থাকলেও তারা অসীমকে রক্ষা করতে কোনো উদ্যোগ নেননি বলে অসীমের অভিযোগ।  

অসীম আরও বলেন, একই সময়ে বৈকালিন বাজারে তার গরিব বাবার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকানটিও নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার বাহিনীর লোকজন ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।

এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মালেক (৫০) এগিয়ে গেলে নজরুল ইসলাম তাকেও লাঞ্ছিত করেন বলে অসীম চন্দ্র শীল জানান।

প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের ভয়ে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে পারেননি অসীম। এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করতেও সাহস করেননি। প্রথমে মঠবাড়িয়া হাসপাতালে এবং পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে জানান অসীম।  

এ বিষয়ে স্থানীয় জহিরুল ইসলাম উজ্জল বলেন, “মারধরের সময় অসীমকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে আমাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী।”

তিনি বলেন, নির্বাচনে যারা নজরুল ইসলামকে সমর্থন দেয়নি তাদেরকে নির্বাচনের পরে খেলা দেখাবেন বলেও নির্বাচন চলাকালে হুমকি দিয়েছিল নজরুলের ক্যাডাররা।

এ বিষয়ে রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বরং অসীম চন্দ্র শীল এবং তার সহযোগীরা আমার লোকজনের উপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে দুয়েকজন সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারে। এর বেশি কিছুই নয়।”

এ বিষয়ে জানতে বামনা থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে বামনা থানার ওসি মো. বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন। তবে কেউই এখনও পর্যন্ত তার কাছে মামলা করতে আসেননি।