আশ্রয়হীন এসব মানুষ আগে নানা জনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস চেয়ে আনেতেন। কখনওবা অন্যের বাড়িতে ঈদ করতেন।
জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এবার তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধুর নামে কোরবানি দিয়ে মাংস ভাগ করে নিয়েছেন। নিজের মতো করে নিজের ঘরে ঈদ; এর তো তুলনা নেই।
সরেজমিন মোহাজেরাবাদ আশ্রয়ণের বিভিন্ন ঘরে ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয় বুধবার ঈদের দিন বিকালে।
মোহাজেরাবাদ আশ্রয়ণের বাসিন্দা বীরঙ্গনা মায়া খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, থাকতেন অন্যের বাড়িতে। ভাঙা ঘর চালের টিনে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ত। ঘরের ভেড়া খসে পড়ত। ঈদ করতেন কখনও অন্যের বাড়িতে, কখনও ভাসমান অবস্থায়। মাংস আনতেন মানুষের বাড়ি থেকে হাত পেতে।
মায়া জানান, এবার মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া নিজের বাড়িতেই ঈদ করেছেন। নিজের ঘরের সামনেই হয়েছে সম্মিলিত কোরবানি। তার ভাগে পড়েছে বেশকিছু মাংস। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিন্দুরখান থেকে কয়েকজন স্বজন আসার কথা ঈদে দাওয়াত খেতে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভুতি, যা আগে কখনও পাননি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের মধ্যেও আনন্দের সীমা ছিল না। নতুন জামা পরে তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে দাওয়াত খেয়েছে। বেলুন নিয়ে খেলেছে। সংসারে শত অভাব অনটন থাকলে কারো চোখেমুখে বিষাদ ছিল না।
মোহাজেরাবাদ আশ্রয়ণের অপর বাসিন্দা হৃদয় মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছ থেকে উপহার পেয়ে তারা এবার বড় একটি গরু বঙ্গবন্ধুর নামে কোরবানি দিয়েছেন। মোহাজেরাবাদ ও বেগুনবাড়ি দুটি আশ্রয়ণে প্রত্যেকেই সমান ভাবে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
মোহাজেরাবাদ আশ্রয়ণে একমাত্র হিন্দু বাসিন্দা বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। ঈদ আনন্দে সামিল হয়েছেন তিনিও।
শিলা গুহ বলেন, জেলা প্রশাসক মুসলিমদের জন্য কোরবানির গরু দিয়েছেন। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে দুটি মুরগি দিয়েছেন। সকালে আশ্রয়ণের ঘরে ঘরে চা সেমাইয়ের দাওয়াত খেয়েছেন। ঈদে এত আনন্দ হয় এই প্রথম তিনি অনুভব করলেন।
ইউএনও নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঠিকানাহীন মানুষেরা তাদের নিজের ঠিকানায় প্রথম ঈদ করছে। তাদের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে তিনি ছুঠে আসেন এখানে। সরল এই মানুষগুলোর সঙ্গে তিনি ঈদ করেছেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি যেন সব ভুলে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন তিনি ওই পরিবারগুলোরই সদস্য।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্পগুলো স্বতন্ত্র, যেখানে যোগাযোগ থেকে জীবিকায়ন সকল সুবিধা বিরাজমান। এখানে আশ্রয় হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহন করা বীর মাতাদেরও।
তিনি জানান, মোহাজেরাবাদে তিনি কোরবানির জন্য একটি গরু দিয়েছেন; যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করে আশ্রয়ণবাসী কোরবানি দিয়েছেন। তারা যে ঈদে আনন্দ করছেন তিনি ঘরে বসেই খবর নিয়েছেন। শুনে তার খুব ভালো লেগেছে।
“নিরাশ্রয় এ মানুষগুলো আশ্রয় পেয়ে এবারের ঈদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে প্রাথর্না করেছেন- তিনি যেন ভালো থাকেন।”