শার্শায় গ্রামে গ্রামে দরিদ্ররা পেলেন ঈদসামগ্রী

যশোরের শার্শার গ্রামগুলোতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে ঈদসামগ্রী দিয়েছে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2021, 03:56 PM
Updated : 18 July 2021, 03:56 PM

গত কয়েকদিন ধরে সরকারিভাবে শার্শা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে এবং বেনাপোল পৌরসভায় বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়।

একই সময়ে ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন এলাকায় ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয় অসহায় মানুষের মধ্যে।

শার্শ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা জানান, উপজেলায় সরকারিভাবে ২৪ হাজার ৭৯১ জন দুঃস্থ-অসহায় পরিবারে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে ২০ হাজার ১৭০ জন ও বেনাপোল পৌরসভায় ৪৬২১ জনকে ১০ কেজির ওই চালসহ বিভিন্ন খাবার সামগ্রী দেওয়া রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লাল্টু মিয়া জানান, ভিজিএফ চালের বাইরেও চাল, ডাল, তেল, লবণ ও নুডুলস এর সমন্বয়ে প্যাকেট করে উপজেলার ১ হাজার ১৯৭টি দুঃস্থ-অসহায় পরিবারে উপহার বিতরণ করা হয়।

যশোর জেলা পরিষদ সদস্য এসএম ইব্রাহিম খলিল বলেন, ঈদে সরকারি সহায়তায় পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও শার্শা উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার অসহায় দরিদ্র পরিবার ঈদ সামগ্রী পেয়েছে।

বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বসতপুর গ্রামের রজব আলির স্ত্রী কোহিনুর বিবি (৭৫) বলেন, “দশ বছর হলো খুকার বাপ মরে গেছে। এরপর আর জীবনে ঈদ আসিনি। ঈদ আর অন্য দিনের মদ্দি কোনো তফাত বুঝিনি। এবার ঈদে সব পাইছি। শেখের বেটি এবার সব করিছে।”

জামতলার আব্দুর রহিমের (৬৫) সব সুখ কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার। তিনি নিজে কাজ করতে পারেন না। তার স্ত্রী হোটেলে কাজ করে যা পান তা দিয়েই চালাতে হয় সংসার।

তিনি বলেন, “সরকার বয়স্কভাতা দেয় বটে, তা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়। এবার উপহার পেয়ে বহুদিন পর ঈদ করব।”

বাস্তুহীন তাসলিমা ভাড়া বাসায় থাকেন। অন্যের বাড়ি কাজ করে জীবিকা চালান। ৫৫ বছর বয়সী এই নারীর কোনো স্বজন নেই।

সাতমাইল গ্রামের ৭০ বছর বয়সী শহরবানুকে দেখার কেউ নেই। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল, ডাল, তেল ও সেমাই-চিনি ও নুডুলস পেয়ে খুব খুশি।

বেনাপোল গ্রামের জুলেখা বেগম (৫৫) বলেন, “লোকের বাড়ি কাজ কত্তাম। করোনায় কাজ হারাইছি। খুব অসুবিধায় দিন কাটাচ্ছি। দুবেলা ভাত জুটাতি পারিনে; তারপর আবার সেমাই চিনি কেনব কী করে। এবার চাল পাইছি, সেমাই চিনি পাইছি। এতে আমি খুব খুশি।”

টেংরা মাঠপাড়ার ভ্যানচালক রুহুল আমিন (৬৫) ও তার স্ত্রী জামিরন নেছা খুকির (৫৫) একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে দুবছর। তাদের ছেলে নেই। এখন কাজ করে জীবিকা চালানো তাদের জন্য কঠিন।

খুকি বলেন, “এবার ঈদটি নতুন করে অ্যায়েছে। অনেক বছর ঈদ আসেনি। এবার ঈদে সেমাই, চিনি, চাল, টাকা পাইছি।”

বসতপুর গ্রামের সুরুজ মিয়ার বিধবা স্ত্রী মঞ্জুরা বিবি (৭৫) বলেন, "ছেলেরা ভ্যান চালায়, তাদের তাই চলে না। তারা আমারে দেখপে কী করে? শেখ হাসিনার দেওয়া বিধবা ভাতা পাই, মাসিক চাল পাই, তা দিয়ে চলে। এবার ঈদি সব পাইছি। শেখ হাসিনা বেঁচে থাক এই দুয়া করি।"

বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ইউনিয়নের ২৬০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম ডাল, ১ কেজি করে আলু দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে সরকারিভাবে পাওয়া গেছে ২৩৫৭ পরিবারের চাল। বাদবাকি ২৪৩ পরিবারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।”

বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি সহায়তার বাইরে বেনাপোলের প্রাইভেটকার একতা সমিতির ২০১টি  সদস্যের মাঝে এবং ইউনিয়ন ও পৌর শহরের সর্বমোট ১২৬০টি পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

শিকড়ি বাহারুননেছা কাশেম আলী হিজবুল কোরান এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামছুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বেনাপোলের শিকড়ী, খড়িডাঙ্গা ও মালিপোতা গ্রামের ৩৩৫টি অসহায় দুঃস্থ পরিবারের মাঝে ৮শ টাকা করে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

টাইগার ক্লাবের সভাপতি বাহার আলী বারু বলেন, ক্লাবের পক্ষ থেকে বেনাপোলের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০টি অসহায় দরিদ্র পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী হিসেবে দুই ধরনের সেমাই, চিনি, দুধ, ডালডা, কিসমিস ও বাদাম দেওয়া হয়েছে।