প্রতিদিন সুস্থ হওয়া রোগীর চেয়ে শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেশি। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট দেখা দিচ্ছে।
বিশেষ করে খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার হাসপাতালগুলোয় চাপ অনেক বেশি। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সূচকেও এই তিন জেলা বিভাগের শীর্ষে আছে।
গত কয়েকদিন খুলনার চারটি করোনা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। ভর্তির জন্য রোগী আর স্বজনেরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছেন। ঘুরছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। শয্যা না পেয়ে অনেকের ঠাঁই হচ্ছে মেঝেতে।
খুলনার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার কু্ণ্ডু বলেন, আগের চেয়ে রোগীরা এখন বেশি হাসপাতালমুখী হচ্ছে। আইসিইউ প্রয়োজন এমন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর বাইরেও রোগীদের জন্য প্রচুর অক্সিজেন লাগছে। হাসপাতালের নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্টটি চালু না হওয়ায় সিলিন্ডারের ওপর ভরসা বাড়ছে।
দিলীপ বলেন, খুলনার সরকারি দুটি হাসপাতালের আইসিইউ কখনোই খালি থাকছে না। এখন অবস্থা এমন হয়েছে, সব সময় ৩০/৪০ জন রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষায় থাকছে।
“এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় থাকছে না। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলেই তবে আইসিইউ শয্যা খালি হচ্ছে।”
এদিকে, করোনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনার সরকারি-বেসরকারি চারটি হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪শ করোনা রোগী থাকছে। তাদের একজনের সঙ্গে একাধিক স্বজন থাকছেন; যারা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, “আমরা কঠোরভাবে নিষেধ করছি। কোনো করোনা ইউনিটে দর্শনার্থী বা স্বজনরা প্রবেশ করতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা তাদের ফোন করব। কিন্তু অনেকে আবেগে এই শর্ত মানছে না। তাছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন যদি কেউ সচেতন না হয় তাহলে তো সংক্রমণ বাড়বে।”
“এই নির্দেশ কেউ না মানলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
বুধবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, খুলনা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে; মারা গেছেন ৩৬ জন। এর আগে মঙ্গলবার বিভাগে ৪৮ জনের মৃত্যু এবং ১ হাজার ৫৮৮ জনের শনাক্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৪০১ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৭২৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ হাজার ৮২৭ জন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায়। খুলনায় ৯ জন, ঝিনাইদহে সাত জন, যশোরে পাঁচ জন, মেহেরপুরে দুই জন, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় একজন করে মারা গেছেন।