আগামী ২১ জুলাই ঈদ-উল-আজহা। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি এবং পশুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে বিক্রেতাদের মাঝে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা বিরাজ করছে।
জেলার পাঁচটি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি পশুর হাট বসবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
আকাঙ্ক্ষিত দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন বলে জানান অনেক খামার ব্যবসায়ী।
ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরামের চৌধুরী এগ্রো ফার্মের মালিক ও পরশুরাম পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বলেন, “প্রত্যেক বছর কোরবানির ৪/৫ মাস আগে আমার খামারে বড়-ছোট মিলিয়ে ৫শ থেকে ৬ শতাধিক গরু প্রস্তুত রাখতাম।”
গত বছর মার্চ মাস থেকে করোনায় দেশের সবকটি গরু বাজার বন্ধ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কারণে তিনিসহ অন্য অনেক খামারি তেমন গরু কিনতে পারেননি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় তিনি তিন ভাগের এক ভাগ গরু কিনতে পেরেছেন।
এবছর কোরবানি পশুর বাজার কোন পরিসরে হবে এখনও সেই বিষয়ে তারা কোনো নির্দেশনা পাননি বলেন জানান নিজাম উদ্দিন।
আরেক খামারি আরাফাত খান বলেন, ফেনী শহরের পাঠান বাড়ি এলাকায় হাসিনা অ্যাগ্রো নামের একটি তার খামার রয়েছে। নবীন এই খামারি আসন্ন ইদুল আজহাকে ঘিরে তার খামারে ২৫টির গরু লালন পালন করেছেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করেছেন ২৫ লাখ টাকার মত।
“ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থাকলেও চলমান লকডাউনের কারণে পশুর হাটে গরু বিক্রি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
শুধু পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল কিংবা ফেনীর আরাফাত খান একা নন, নিজেদের লালিত-পালিত ও ক্রয়কৃত পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এমন আরও অনেক খামারি। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ঈদে ব্যবসা কী হবে এটা ভেবে অনেকেই চোখে অন্ধকার দেখছেন।
প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ফেনীতে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭২ হাজার। অপরদিকে এ জেলায় লালনপালন করা হচ্ছে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদিপশু। প্রতিবছর কোরবানি ঈদ এলে শহর-নগর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লার সব জায়গায় বসে পশুরহাট। কিন্তু করোনার এই মহামারিতে পশু ক্রয়-বিক্রয় কীভাবে হবে এ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে খামারি ও ক্রেতা দু’পক্ষের মধ্যেই।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, ফেনীতে এবার কোরবানির পশুর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ছোট-বড় খামারির পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কোরবানির পশু লালনপালন করছেন। এর সংখ্যাও ২০ হাজারের অধিক।
এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি চোরাইপথে ভারতীয় গরু এলে লোকসান আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
ভারতীয় গরুর প্রবেশ প্রসঙ্গে খামারি সাজেল চৌধুরী বলেন, পরশুরামের বক্সমাহমুদের খাজুরিয়া ও মির্জানগর সীমান্ত দিয়ে প্রতি রাতে কয়েকশ গরু প্রবেশ করে। এভাবে যদি গরু ঢোকে, তাহলে দেশি খামারিদের সব কষ্ট, শ্রম ও পুঁজি বৃথা যাবে।
সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।
ফেনীর ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহিম বলেন, কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্তে গরু চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবির সদস্যরা, বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও।
ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, অবৈধ পথে ভারতীয় পশু আসা বন্ধ করার জন্য বিজিবি ও পুলিশকে টহল বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গরু বাজারে আসা ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক।
প্রতিবারের মতো এবারও ফেনী জেলার পাঁচটি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি পশুর হাট বসবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।