চাঁদপুরে অনলাইনে গরু বিক্রিতে ঝুঁকছে খামারিরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী ও কঠোর লকডাউনের কারণে চাঁদপুরের খামারিরা অনলাইনে গরু বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন; এতে ক্রেতাদের বেশ সাড়াও মিলছে বলে জানান বিক্রেতারা।

আল ইমরান শোভন চাঁদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2021, 03:54 PM
Updated : 11 July 2021, 03:54 PM

স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে প্রশাসনও অনলাইনে গরু বেঁচাকেনায় উদ্বুদ্ধ করছেন বলে স্থানীয় খামারিরা জানান।

তবে ঈদের বাজারে যেন বিদেশি গরুর আমদানি না হয় সে ব্যাপারে নজরদারির দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।

জেলার গরু খামারিরা জানান, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা; কিন্তু চলমান কঠোর লকডাউন ও করোনা সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে লোকসান কাটিয়ে উঠতে অনলাইনে গরু বেচা-কেনার কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা।

ঈদে গরুর ভালো দাম পেতে প্রাকৃতিক উপায়ে দেশীয় পদ্ধতিতে চলছে গরু মোটাতাজাকরণ। গরুকে নিয়মিত খাওয়ানো হচ্ছে খৈল, ভুসি, কাঁচা ঘাস, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম। ব্যস্ত সময় কাটছে গরুর খামারে কর্মরত শ্রমিকদের।

সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ শাখুয়া এলাকার এইচবি এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী মো. হারুনুর রশিদ বলেন, তার খামারে ২০টি গরু পালন করছেন। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তাদের বড় করে তোলা হয়েছে। প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, ভুসি খাওয়ানো হচ্ছে। কোনো প্রকার ‘অবৈধ ওষুধ’ ব্যবহার করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “লকডাউনের কারণে এখনও পর্যন্ত কোথাও হাট বসেনি। কবে নাগাদ বসতে পারে তারও ঠিক নেই। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে অনলাইনেই গরু বিক্রি করছি আমি। অনলাইনে জনসমাগম না থাকায় ক্রেতাদের সাড়াও পাচ্ছি বেশ। তবে এই সংকটকালীন সময়ে বিদেশি গরুর আমদানি ঠেকাতে সরকারের নিকট দাবি জানাই। নয়তো আমরা দেশি খামারিদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।”

শহরের নাজিরপাড়া মাদ্রাসা রোড এলাকার আরেক খামারি সিয়াম হোসেন বলেন, “ঈদের বিক্রি করে কিছুটা লাভবান হওয়ার জন্য আমারা গরু মোটাতাজাকরণ করে আসছি। কিন্তু মহামারী করোনায় বিগত বছরের মতো এবারও বেশ বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। গত বছরের করোনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার অনলাইনে গরু বিক্রি শুরু করেছি। তবে গরুর যেই দাম চাচ্ছি অনেক ক্রেতাই তার থেকে কম দাম বলছেন।”

করোনাকালীন সময়ে হাটে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় আমরা অনলাইনেই গরু বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।

শহরের প্রফেসর পাড়ার ক্রেতা আবুল কাউসার বলেন, “কুরবানি তো দেওয়াই লাগবে। তাই গরু কিনতে অনলাইনের সহায়তা নিচ্ছি। গরু খামারিরা তাদের পালিত গরুর ছবি বিভিন্ন পেইজে শেয়ার করছে। তা দেখে পছন্দের গরু কিনার চেষ্টা করছি। তবে খামারিরা এবছর গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন।”

ইকবাল হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “এমনিতেই করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। গরুর হাটে তো জনসমাগম অনেক বেশি থাকে। তাই এবছর অনলাইনেই গরু কিনার চিন্তাভাবনা করছি। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।”

করোনাকালীন সময়ে অনলাইনে কুরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, “স্থানীয় খামারিরা অনলাইনে তাদের পশু বিক্রি করছে; বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। করোনার এই সময়টাতে অনলাইনে পশু বিক্রি করায় জনসমাগম এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতা সহজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারবেন।”

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও একটি পেইজ তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোনো খামারি যদি তাদের গরুর বিজ্ঞাপন আমাদের পেইজে দিতে চায় তবে তাদেরকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। চাঁদপুরবাসী আমাদের পেইজে দেওয়া খামারিদের গরুর ছবি দেখে তাদের পছন্দের গরু ক্রয় করতে পারবেন।”

জেলা প্রশাসক বলেন, “যেহেতু আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিধিনিষেধ আছে। তাই ১৪ তারিখ পর্যন্ত জেলার কোথাও গরুর হাট বসানোর অনুমতি দিচ্ছি না।”

“এরপর যদি কোনো নির্দেশনা পাই, তখন আমরা হাট বসানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব,” বলেন তিনি।

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর চাঁদপুরের আট উপজেলায় ছোট-বড় তিন হাজার ২০০ খামারি ১ লাখ ১৭ হাজার গবাদি পশু মোটাতাজা করছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৩৯ হাজার। জেলায় কুরবানির চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৮হাজার পশুর।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত কুরবানির পশু মজুদ রয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশি পশু যেন দেশে ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। তাছাড়া খামারিরা যেন কোনো নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস তৎপর রয়েছে।