‘রিকশাবিহীন শহর’ রাঙামাটির নিরুপায় অটোচালকরা

দেশের ‘রিকশাবিহীন শহর’ খ্যাত পার্বত্য শহর রাঙামাটির গণপরিবহন বলতে শুধু অটোরিকশা।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2021, 04:52 PM
Updated : 10 July 2021, 05:24 PM

এ শহরে ঘর থেকে বেরুলেই অটোরিকশাই একমাত্র ভরসা। তা বন্ধ থাকলে বিপন্ন হয়ে পড়ে এ শহরের মানুষও।

গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে রিকশা চলাচলে বাধা না থাকলেও অটোরিকশা চালানোয় নিষেধ আছে। রিকশা না থাকায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে স্থবির শহরে পরিণত হয়েছে।

তবে গত বছর থেকে শুরু হওয়া মহামারীর প্রকোপে কখনো লকডাউন আর কখনো পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ শহরের অটোচালকরা সঞ্চয় শূন্য হয়ে গেছে। তারা ‘টিকে থাকার মত সংস্থান হারিয়েছেন’।

শহরের রিজার্ভবাজার এলাকার বাসিন্দা সংবাদকর্মী শংকর হোড় বলছেন,“আমরা ও অটোরিকশা চালকরা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

“করোনার শুরুতেই লকডাউনে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ার পর থেকেই অটোরিকশা চালকরা বেশ অস্বস্তিতে পড়েন, সেটা আমরাও বুঝেছি। এখন তো একেবারেই চলাচল বন্ধ। তারা তো খুব স্বাভাবিক কারণেই বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।”

অটোচালক মোহাম্মদ আনোয়ার বলছেন, “সারাদিন ট্যাক্সি চালিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পাই, সেটা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। তার সাথে আছে এনজিও ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ।

“এখন তো আমরা একেবারেই অসহায় পড়ে পড়েছি। তিনবেলা খাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের দেখারও কেউ নেই।”

যদিও রাঙামাটি অটোরিকশা চালক সমিতি শহরের প্রভাবশালী সংগঠন। এ সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার চারশ। শহরে বৈধ ৬৪০টি এবং নম্বরহীন আরও প্রায় তিনশ অটোরিকশা চলাচল করে।

গত বছর এ সমিতির পক্ষ থেকে সদস্যদের প্রত্যেককে ২৫ কেজি চাল, ৫ লিটার সয়াবিন এবং নগদ এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়। পরে আবার ২৫ কেজি চাল এবং এক হাজার টাকা দেয় তারা।

এ বছর একবার নগদ ১ হাজার টাকা করে প্রদানও করা হয়। তবে প্রায় ১৪০০ সদস্যের এ খরচ সংস্থান করতে গিয়ে সংগঠনটির খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

মহামারীর মধ্যে রাঙামাটির সাবেক জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ গত বছর সমিতির সদস্যদের জন্য আড়াই টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন।

অটোরিকশা চালক সমবায় সমিতির সভাপতি পরেশ মজুমদার বলেন, “চালকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমাদের তহবিল শূন্য হয়ে গেছে। এখন আমরাও অসহায়।”

তাদের ব্যাংকে ‘এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত এবং ৮৬ লাখ টাকায় কেনা একটি জায়গা ছাড়া আর কিছুই নাই’।

পরেশ মজুমদার বলেন, “আমাদের চালকরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করছে। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।”