উপহারের ঘর তৈরিতে গাফিলতি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টিম মুন্সীগঞ্জে

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ ও স্থান নির্বাচনে অভিযোগে ওঠার পর সরেজমিনে তদন্তে নেমেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 12:44 PM
Updated : 9 July 2021, 12:46 PM

শুক্রবার দুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ভাসানচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছে একটি টিম।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘর নির্মাণে গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর পাঁচটি টিম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবে বলে বৃহস্পতিবার বলেছিলেন প্রকল্প-২ পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন।

শুক্রবার পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঘর নির্মাণ কাজে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স রয়েছে। এই করোনাকালীন সময়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৬০টি ঘর নির্মাণ কম কথা নয়।

“সকল জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে- আমরা মাঠে আছি তোমরাও মাঠে থাকো। যাতে কোনো জায়গায় কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি না থাকে। কোথাও তা পাওয়া গেলে যেন তা সংশোধন করা হয়।”

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার ভাসানচরে শুক্রবার ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি টিম

প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নের প্রকল্পের কাজে কোনো অবহেলা করা হবে না, অবহেলা সহ্যও করা হবে না, বলেন মাহবুব হোসেন।

এই মুহূর্তে ঘর নির্মাণ করা যাবে এমন খাস জমি পেলে ঘর নির্মাণ করতে হবে বলে প্রকল্প অফিসের ‘সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া ছিল’, বলেন প্রকল্প পরিচালক জানান।

“আমরা কাউকে বলিনি তোমরা নদীর পাড়ে, খালের পাড়ে মাটি ভরাট করে এখনই করো। ত্রুটি বিচ্যুতি দু-একটি হয়ে থাকলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

ঘর নির্মাণে অনিয়মে জড়িতদের ব্যাপরে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাহবুব বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণের বাইরে কেউ নেই। সরকারি টাকা অপচয় হউক, জলে যাক তা আমরা চাইনি।”

এই অনিয়মের তথ্য দেওয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালক সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবং সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান যাতে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন।

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার ভাসানচরে শুক্রবার ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি টিম

পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ এর উপ-পরিচালক মো. জাহেদুর রহমান, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপক কুমার রায়, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে ভাসানচরে উপহারের ঘর উদ্বোধন হলেও ঘরে উঠতে পারেনি উপকারভোগীরা। ওঠার আগেই ভেঙে পড়ছে ঘর। অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা পড়ে আছে। কোনো কোনোটি মেরামত করে নতুন করা হচ্ছে।

সদরের আধারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কাসেম পীর বলেন, আজাদ নামের আগের এক ঠিকাদার এই নিম্নমানের কাজ করেছেন; সে কারণেই বেহাল অবস্থা। এখন সে পালিয়ে গেছে। ইউএনও ঘরগুলো সঠিকভাবে তৈরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাচ্চু ব্যাপারী বলেন, ঘরগুলো এখন মজবুতভাবে তৈরি হচ্ছে। তবে প্রথম দিকে যা তা অবস্থা ছিল। সে কারণেই নতুন ইউএনও সাহেব এখন ভালোভাবে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। 

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার ভাসানচরে শুক্রবার ঘর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি টিম

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, ঘরগুলো নির্মাণ সঠিক না হওয়ায় এখন ডিজাইন অনুযায়ী করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে এই কর্মস্থলে যোগদানের পরই কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ঘরগুলো মানসম্মতভাবে নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। 

ভাসানচরে ২০০টি ঘরের নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে সাবেক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অ্যাসিল্যান্ডসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বড় রায়পাড়া গ্রামেও প্রকল্পের কয়েকটি ঘর আংশিক ধসে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি ঘর। সেখানে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে নদীর ধারে। ফলে যে কোনো সময় বন্যায় ভেসে যাওয়া কিংবা ভাঙনে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প তৈরি হয়েছে নদীর তীর ঘেঁষে, যার ফলে বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতির আশঙ্কা রয়ে গেছে।

বড় বায়পাড়ায় ২৮টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তার মধ্যে পাঁচটি পরিবারকে সেখানে থাকতে দেখা গেছে। পানি ও রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অন্যরা রাতে ঘরে থাকেন না। তবে বরাদ্দ টিকিয়ে রাখতে দিনে এসে ঘোরাফেরা করেন।

২৭ নম্বর ঘরের বারান্দার কিছু অংশ ও একটি কলাম ভেঙে পড়া দেখা যায়। ঘরের নিচ থেকে মাটিও সরে গেছে। পাশের ২৮ নম্বর ঘরটিরও একই অবস্থা। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে একই সারির অন্তত ছয়টি ঘর।