শান্তনু ঠাকুর ভারতের মন্ত্রী, গোপালগঞ্জে মতুয়ারা উচ্ছ্বসিত

শান্তনু ঠাকুর ভারতের মন্ত্রী হওয়ায় গোপালগঞ্জের মতুয়া সম্প্রদায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 12:43 PM
Updated : 9 July 2021, 12:43 PM

বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি সুব্রত ঠাকুর বলেন, “মতুয়াবাদের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের অন্যতম উত্তরসূরি শান্তনু ঠাকুর। আমিও হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি। আমরা ষষ্ঠ পুরুষ।

“শান্তনু ঠাকুর ভারতে থাকলেও আমাদের পরিবারের সদস্য। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির ঠাকুর পরিবারসহ সমগ্র মতুয়া সমাজ আজ গর্বিত।”

বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ৪৩ জন মন্ত্রী শপথ নেন। শান্তনু ঠাকুর তাদেরই একজন।

সুব্রত ঠাকুর বলেন, “শান্তনু মন্ত্রী হওয়ার খবরে মতুয়াদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ইতোমধ্যে ফেইসবুকে শান্তনু ঠাকুরকে অভিনন্দন জানিয়ে মতুয়াদের পক্ষ থেকে হাজার হাজার পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

“ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি এ আনন্দে উদ্বেলিত। মহামারীতে আমরা ঘরে বসে আনন্দ উপভোগ করছি। শান্তনু ঠাকুর মতুয়া অনুসারীসহ ভারতের মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা করছি।”

সুব্রত ঠাকুর বলেন, “নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আধ্যাত্মিক পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুর ১২১৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। ১২৮৪ সালে একই তিথিতে তিনি তীরধানে যান।”

মতুয়া অনুসারী সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “বর্ণপ্রথায় হেয়প্রতিপন্ন, নিপীড়িত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ত্রাতা হিসেবে আর্বিভূত হন হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন।  বর্ণ প্রথায় অধিকার-হারাদের শিক্ষা বিস্তারে তিনি কাজ করেছেন। তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করেন। হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়াবাদ প্রচার করেছেন। তিনি নীলকুঠির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছেন। তিনি সব প্রতিকূলতা প্রতিহত করে মতুয়াবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

“ওড়াকান্দির পূর্ণভূমিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলা শুধু আধ্যাত্মিক ছিল না, এটি পার্থিবভাবে মানুষের জাগতিক উন্নয়নের আন্দোলন ছিল। সে কারণেই মতুয়াদের কাছে শ্রীধাম ওড়াকান্দি প্রণাধিক পবিত্র স্থান। হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ শান্তনু ঠাকুর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এতে হারচাঁদ ঠাকুরের মতুয়াবাদের আন্দোলন ভারতে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে আমি মনে করি।”

হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ মতুয়া মিশনের সভাপতি ও মতুয়াচার্য পদ্মনাভ ঠাকুর বলেন, “শান্তনু ঠাকুর ভারতের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের মন্ত্রিসভায় এই প্রথম কোনো মতুয়া প্রতিনিধি স্থান পেলেন।

“গত বিধানসভা নির্বাচনে শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তৃনমূলের কাছ থেকে অনেক আসন ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। শান্তনু ঠাকুর মন্ত্রী হবে বলে মতুয়াদের প্রত্যাশা ছিল। মতুয়াদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এতে আনন্দে উদ্বেলিত উভয় বাংলার মতুয়া  জনগোষ্ঠী। ভবিষ্যতে শান্তনু ঠাকুর ভারতের জাতীয় নেতার পদও পাবেন বলে প্রত্যাশা করি।”

নিজেকে হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি দাবি করে পদ্মনাভ ঠাকুর বলেন, “শান্তনুর চেষ্টায় নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দি এসেছেন। একাধিকবার ওড়াকান্দি এসে শান্তনু ঠাকুর ওড়াকান্দিসহ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সেতুবন্ধ রচনা করেছেন।”

বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহাসচিব সাগর সাধু ঠাকুর বলেন, “ভরতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দি সফরে আসার পর আমরা শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রী করার দাবি জানাই। মোদী জি শান্তনুকে সে সুযোগ দিয়েছেন। এজন্য আমরা মোদী জিকে অভিনন্দন জানাই।

“মহামারী গেলে আমরা শান্তনু ঠাকুরকে বাংলাদেশে এনে মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেব।”

তিনি বলেন, “শান্তনু মন্ত্রী হওয়ায় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত কোটি কোটি মতুয়াভক্ত অনন্দে উদ্বেলিত। আমরা ফোনে ফোনে মতুয়াদের সঙ্গে এ আনন্দ ভাগাভাগি করছি।”