হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানা থেকে আরও ৪৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকনারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 07:46 AM
Updated : 10 July 2021, 04:57 AM

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আমরা ৪৮টি বডিব্যাগে মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি ময়নাতদন্তের জন্য।”

ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছয় তলা কারখানা ভবনের উপরের দুই ফ্লোরে এখনও আগুন জ্বলছে।

“নেভানোর কাজ এখনও চলছে। এ পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃতদেহ পেয়েছি। আমাদের সার্চ এখনও শেষ হয়নি।”

উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় ওই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকালে আগুন লাগার পর রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।

দুপুরে লাশ উদ্ধারের আগে স্বজনদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ৪৭ জন নিখোঁজ শ্রমিকের তালিকা করেছিল রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত বলেন, “অনেক লাশ শনাক্ত করার মত অবস্থায় নেই। সেগুলো ঢাকা মেডিকেলের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বলা হবে।”

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানা থেকে হতভাগ্য শ্রমিকদের লাশ বের করে আনছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সজীব গ্রুপের ওই কারখানায় সেজান জুস, নসিলার মত জনপ্রিয় পণ্য এবং সেমাই, চানাচুর, ক্যান্ডি এবং বিভিন্ন ধরনের বেভারেজ ও খাদ্যপণ্য তৈরি হত।

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে আগুন লাগার পর মুহূর্তে আগুনের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ছয়তলা ওই কারখানার নিচতলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আগুন জ্বলতে থাকে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, তাদের ১৮টি ইউনিট সারা রাত কাজ করে ভোরের দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। কিন্তু সকালে ভেতরে আবার আগুন বেড়ে যায়।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে ছয় তলা কারখানা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সামনের দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

সজীব গ্রুপের এ কারখানার ওই অংশে সেমাই কারখানা ও গুদাম এবং কার্টনের গুদাম রয়েছে। এছাড়া নিচের ফ্লোরগুলোতে সেজান জুসসহ কোমল পানীয় এবকং খাদ্যপণ্য তৈরি হত বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার রাতে মৃত দুই নারীর পরিচয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। তারা হলেন- সিলেট জেলার যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী (৩৪) এবং রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (৩৩)।

এছাড়া রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়। তার নাম মোরসালিন (২৮) বলে জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

মোরসালিনের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর সুবেদপুর গ্রামে। বাবার নাম আনিসুর রহমান। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন।

আগুন কীভাবে লাগল- সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।

কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।”

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানা থেকে হতভাগ্য শ্রমিকদের লাশ বের করে আনছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আগুনে দগ্ধ ও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত স্বপ্না, মানিক, আশরাফুল, সুমন, সজিব, মেহেদী, মুন্না, মাজেদা, রুমা, মনোয়ারা, নাদিয়া, আছমা, মারিয়া, রুজিনা, সুমা, শফিকুল, সুফিয়া, সুজিদা, পারুল, রওশন আরা, শ্যামলাকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ ইউএস-বাংলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এছাড়া নাহিদ, মঞ্জুরুল ইসলাম, মহসীন হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, আমেনা বেগম ও ফাতেমা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয়জনকে আনা হয়, তাদের মধ্যে তিনজনের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়ায় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।”

আহত আবু বকর জানান, কারখানায় আগুন লাগার পর বাঁচার জন্য ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন তিনি, তখনই আহত হন।

আগুনে কারখানাটির বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরুপণ করা যায়নি।

পুরনো খবর