রূপগঞ্জে নেভেনি কারখানার আগুন, এখনও ‘নিখোঁজ অনেকে’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানার আগুন ১৬ ঘণ্টা পরও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। অনেক শ্রমিকের এখনও খোঁজ না মেলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2021, 04:43 AM
Updated : 9 July 2021, 05:45 AM

শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আগুনে আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে।

“শুক্রবার ভোরের দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু সকালে ভেতরে আবার আগুন বেড়ে যায়। আমরা নেভানোর চেষ্টা করছি।”

সকাল সোয়া ১০টার দিকেও ছয় তলা কারখানা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সামনের দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

সজীব গ্রুপের এ খারখানার ওই অংশে সেমাই কারখানা ও গুদাম এবং কার্টনের গুদাম রয়েছে। এছাড়া নিচের ফ্লোরগুলোতে সেজান জুসসহ কোমল পানীয় এবকং খাদ্যপণ্য তৈরি হত বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। 

আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, “আগুনে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কারখানার ভেতরে অনেকে আটকা ছিলেন যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তারা বের হতে পেরেছেন কিনা বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।”

রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত বলেন, “কারখানার শ্রমিক নিখোঁজ থাকার তথ্য আসছে। তবে কতজন নিখোঁজ, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।”

বৃহস্পতিবার রাতে মৃত দুই নারীর পরিচয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। তারা হলেন- সিলেট জেলার যতি সরকারের স্ত্রী স্বপ্না রানী (৩৪) এবং রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকার হারুন মিয়ার স্ত্রী মিনা আক্তার (৩৩)।

এছাড়া রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়। তার নাম মোরসালিন (২৮) বলে জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

মোরসালিনের বাড়ি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর সুবেদপুর গ্রামে। বাবার নাম আনিসুর রহমান। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম জানান, জুসসহ কোমল পানীয় তৈরির এ কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টাার দিকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তে আগুনের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ছয়তলা ওই কারখানার নিচতলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আগুন জ্বলতে থাকে।

আগুন কীভাবে লাগল- সে বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।

কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “গ্যাস লাইন লিকেজ কিংবা বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে।”

আগুনে দগ্ধ ও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত স্বপ্না, মানিক, আশরাফুল, সুমন, সজিব, মেহেদী, মুন্না, মাজেদা, রুমা, মনোয়ারা, নাদিয়া, আছমা, মারিয়া, রুজিনা, সুমা, শফিকুল, সুফিয়া, সুজিদা, পারুল, রওশন আরা, শ্যামলাকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ ইউএস-বাংলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এছাড়া নাহিদ, মঞ্জুরুল ইসলাম, মহসীন হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, আমেনা বেগম ও ফাতেমা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয়জনকে আনা হয়,

তাদের মধ্যে তিনজনের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়ায় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।”

আহত আবু বকর জানান, কারখানায় আগুন লাগার পর বাঁচার জন্য ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন তিনি, তখনই আহত হন।

আগুনে কারখানাটির বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরুপণ করা যায়নি।