শার্শা-ঝিকরগাছায় হাট বন্ধে ‘২০ হাজার পশু’ নিয়ে বিপাকে

কঠোর লকডাউনে হাট বন্ধ থাকায় যশোরের শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার খামারি ও কৃষক বছরজুড়ে পালন করা ‘২০ হাজার’ গরু-ছাগল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2021, 01:08 PM
Updated : 8 July 2021, 01:10 PM

কোরবানি উপলক্ষে এ দুই উপজেলায় স্থানীয় চাহিদার অনেক বেশি পশু লালন পালন করা হয়েছে বলে জানিয়ে সরকারি প্রাণী কর্মকর্তারা। আর খামারিরা বলছেন, দেশের অন্তত ২০টি জেলার ব্যাপারীরা এখানকার হাট থেকে কোরবানির পশু সংগ্রহ করে থাকেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে অন্যান্য হাটের মতো যশোরের শার্শা উপজেলার সাতমাইল পশুহাট দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ হাটটিও বন্ধ।

শার্শা উপজেলার সবচেয়ে বড় খামার বেনাপোলের পুটখালী গ্রামের নাছির উদ্দিনের (৩৬) খামার। সেখানে গরু, ছাগল, মহিষ এবং ভেড়া লালন-পালন করা হয়।

নাছির উদ্দিন বলেন, “আমার খামারে ৪শ গরু আছে।”

তার মধ্যে রয়েছে কোরবানির উপযোগী করে গড়ে তোলা ১৬২টি গরু। প্রতিবছর ঈদের আগেই তার গরু বিক্রি হয়ে যায়। হাট বন্ধ থাকায় বিক্রি করতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, “নিজেও গরু বাইরে নিতি পারছিনে। বাইরের ব্যাপারিও আসছে না। পড়িছি মহাবিপদে। গরু বেচতি না পারলি ৮ বছর ধরে পরিশ্রম করে গড়ে তুলা খামার নষ্ট হয়ে যাবে।” 

আর হাট বন্ধ থাকায় লগ্নির ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সাতমাইল পশুহাটের ইজারাদার। সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার এ হাট বসে।

এ হাটের ইজারাদার আব্দুল খালেক খতিব ধাবক বলেন, “প্রতি হাটের খরচ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি হাটে সাড়ে ছয় লাখ টাকা আদায় হলে বছর শেষে মূল টাকা উঠবে। অথচ ২৩ জুন থেকে করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে দিয়েছে।” 

এ হাট কমিটির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন বিশ্বাস জানান, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অন্তত ২০টি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন এ হাটে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটের সিংহভাগ 'পশু' এখান থেকেই যায়।

১৯৯৬ সাল থেকে গরু ব্যবসা করছেন খামারি সুজন বলেন, “সারা বছর খামারে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে তৈরি করি কুরবানির হাটে বেচাবিক্রির জন্য। ঈদের আগে এই হাট যদি খোলা না হয় তবে আমাদের পথে বসতে হবে।”

ঝিকরগাছার বল্লা গ্রামের খামারি ইমামুল ইসলাম জানান, কোররবানির সময় বিক্রি খামারে ১৮টি গরু বছর ধরে মোটাতাজা করেছেন।

তিনি বলেন, “একটা গরুও বিক্রি করতি পারিনি। ঈদে যদি ৫টি গরু বিক্রি না করতি পারি তবে সমস্যার অন্ত থাকবে না। " 

ভালো দামের আশায় বিশাল এক গরু পেলেছেন বেনাপোলের নমাজ গ্রামের মুহিত হোসেন। গরুটির নাম রেখেছেন 'বেনাপোলের ডন'।

তিনি বলেন, ২৫ মণ ওজনের ষাঁড়টি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে অন্তত পুঁজি বাঁচবে। হাট বন্ধ তাই ষাঁড়টি নিয়ে পড়েছি মহা ফাঁপড়ে।

শার্শা উপজেলার গবাদিপশুর চিত্র তুলে ধরেন এখানকার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুমা আখতার।

তিনি জানান, এ বছর এ উপজেলায় এক হাজার ২৫ জন খামারি ৪ হাজার ২৮০টি ষাঁড়, ৬০২টি গাভী, ২ হাজার ৯৪৫টি ছাগলসহ মোট ৭ হাজার ২২৫টি গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন, যা উপজেলার চাহিদার দ্বিগুণ।

আর ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপনেশ্বর রায় বলেন, এ উপজেলায় ছোট-বড়ো এক হাজার ১৫৩টি খামারে দুই হাজার ৬৮৫টি ষাঁড়, ২৩১ টি গাভী আছে। এছাড়া, তিন হাজার ৬৯৬টি ছাগল এবং ৩০টি ভেড়া আছে। এসব গরু-ছাগল খামারিরা এ কোরবানিতে বিক্রি করবেন বলে পালন করেছেন।

শার্শার খামারি আখতারুজামান বলেন, 'গ্রামেও এখন গরু সস্তা, নেওয়ার লোক নেই’। গত বছর এই মাপের গরু ৬০-৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার খামারে ৪৫-৪৮ হাজারের ওপর দাম ওঠেনি।

হাট বন্ধ থাকায় বেপারীরা না আসায় এই দুরাবস্থা বললেন তিনি।

বাগআচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল জানান, বাগআচড়ায় ‘করোনা উপসর্গ’ নিয়ে অন্তত ১৬ জন মারা গেছে, তাই জেলা প্রশাসন পশুহাট বন্ধ করে দিয়েছে।

“শতচেষ্টা করেও পশুহাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না।”

ঈদের আগে কোরবানির পশুহাট কীভাবে চলবে জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলীফ রেজা।

বিকল্প পথ হিসেবে তিনি তাদের অনলাইনে পশু বিক্রির উদ্যোগের কথা তুলে তিনি বলেন, " অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য জেলা থেকে একটা পেইজ খোলা হয়েছে।

“উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা খামারিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ওই ওয়েব পেইজে লোড করে দেবে। সেখানে থেকে পশু বেচাকেনার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।"