ঠাকুরগাঁওয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

করোনাভাইরাস মহামারীতে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে ভিড় করছে ক্রেতারা।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2021, 01:26 PM
Updated : 7 July 2021, 01:26 PM

বুধবার দুপুর দুপুরে শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম চত্বরে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকের আশপাশে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিসিবির রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী প্রতাপ কুমার জানান, মঙ্গলবার [৬ জুলাই] থেকে সরকার নিয়োগকৃত ডিলারদের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়, যা চলবে ১৮ জুলাই পর্যন্ত। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার পুণরায় চালু হবে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় টিসিবির পণ্য বিক্রি করার জন্য আট জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদরে চার জন, বালিয়াডাঙ্গীতে এক জন, পীরগঞ্জে দুই জন ও রাণীশংকৈল উপজেলায় এক জন।

তিনি জানান, প্রত্যেক ডিলারকে দৈনিক ৩ ধরনের ১৮০০ কেজি পণ্য দেওয়া হচ্ছে- বোতলজাত সোয়াবিন তেল ৮০০ লিটার, চিনি ৬০০ কেজি এবং মসুর ডাল ৪০০ কেজি।

প্রত্যেক ব্যক্তি সরাসরি টিসিবির ডিলারের কাছ থেকে ১০০ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি চিনি ও ৫৫ টাকা কেজি করে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল ক্রয় করতে পারবে বলে তিনি জানান। 

স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে প্রতাপ কুমার বলেন, প্রত্যেক ডিলারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ডিলারকে সহযোগিতা করবে। তারপরও যদি স্বাস্থ্যবিধি উপক্ষো করে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য ঠাকুরগাঁও জেলার ৮টি পয়েন্টে দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম চত্বরে মেসার্স শাহাদৎ স্টোরের অধীনে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে পুলিশ দেওয়া হলেও কোনোভাবেই ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ আগের মতোই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। অনেক ক্রেতার মুখে মাস্কও ছিল না।

শহরের বসিরপাড়া মহল্লা থেকে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা জোনাকি রাণী বলেন, “সকাল ১০টা থেকে মুই লাইনত দাঁড়ায় আছু, মোর মত অনেকলা মানুষও লাইনত আছে। এইঠে এত্ত ভিড় যে একজন আরেকজনের গাঁত ঘেঁষা দিয়ে আছে।”

শহরের সেনুয়াপাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, “করোনার কারণে লকডাউন চলছে; এই কঠিন সময়ে বাজার দর থেকে কম দামে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছে। এটি শুনেই এখানে এসেছি। অনেক মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ৫ কেজি তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডাল কিনেছি।”

গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছেন কেন জানতে চাইলে শহরের শান্তিনগরের শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, আমাদের করোনা হবে না। আল্লাহই আমাদেরকে রক্ষা করবে।”

মুখে মাস্ক না পরে লাইনে দাঁড়ানো শহরের টিকাপাড়ার নাসরিন আক্তার বলেন, “২ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, ঘেমে গেছি; তাই মাস্ক খুলে রাখছি। মাস্ক পরলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।”

টিসিবির মেসার্স শাহাদৎ স্টোরের ডিলার শাহাদৎ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাদের লাইনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেই। এমনকি দূরত্ব বজায় না রাখলে পণ্য দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিছুক্ষণ ঠিক থাকলেও আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিসিবি পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করেছি।”

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রকিবুল আলম চয়ন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লকডাউনের মধ্যে সরকার টিসিবির মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের মাঝে পণ্য বিক্রি করছে এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এটা মনে রাখতে হবে এই পণ্য ক্রয় করতে এসে কেউ যেন করোনায় আক্রান্ত না হয়।

তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য ক্রয়ে স্বাস্থ্যবিধি মনতে হবে, কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্বে বজায় রেখে পণ্য ক্রয় করতে হবে। পারলে সেখানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সর্বোপরী জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করবে টিসিবির পণ্য বিষয়ে দায়িত্বরত অফিসার ও ডিলাররা। তারপরও যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বছরের ১১ এপ্রিয় প্রথম ঠাকুরগাঁও জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৮৭ জন; এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৬০৬ জন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১০৪ জন।