বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষায় বানর ধরতে গিয়ে ‘লাঞ্ছিত’

করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার জন্য বানর ধরতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের কর্মীরা।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2021, 03:00 PM
Updated : 4 July 2021, 03:57 PM

রোববার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানির পাঁচজনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

মানব দেহে প্রয়োগের আগে প্রাণীর দেহে এ টিকার কার্যকারিতা যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গাজীপুরে এ দিন বানর ধরতে যান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের পক্ষে গ্লোবাল টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ক্যামেরাপার্সন ফাহাদ আল কাদরিসহ তাদের দুই গাড়ি চালক।

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ না দিলেও ‘লাঞ্ছিত’ আনিসুর রহমান জানান, ১০টি বানর ধরার পর স্থানীয় কয়েকজন লোক বানরের জন্য তাদের কাছে ‘টাকা দাবি করেন’। ‘টাকা না দেওয়ায় তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে’ তারা। তাদের কাছ থাকা ‘টাকাপয়সাসহ’ বানরগুলো ছিনিয়ে নেয় স্থানীয়রা বলেও অভিযোগ করেন।

এসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ তাদের সংরক্ষণে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে আইনি ব্যবস্থা নেবেন তারা।

এদিকে, ‘উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে’ গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের লোকজনকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়ার কথা জানান শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন।

তিনি জানান, বানর ধরার জন্য মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্রসহ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের লোকজনকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বানর ধরার অনুমোদন প্রসঙ্গে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ বঙ্গভ্যাক্স বানরের দেহে পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়। এজন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়েটেক লিমিটেড পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে ৫৬টি বানর ধরার আবেদন করে।

পরদিন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী প্রধান বন সংরক্ষককে ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক বানর ধরার এবং ব্যবহারের জন্য চিঠি পাঠান। প্রধান সংরক্ষক সেই সংক্রান্ত একটি কপি তবিবুর রহমানকেও দেন।

তবিবুর রহমান বলেন, গ্লোব বায়োটেক গিনিপিগ এবং খরগোসের উপর এ টিকা পরীক্ষার পর বানরের দেহেও প্রয়োগের জন্য এসব বানর প্রয়োজন হচ্ছে। ২৯ জুন থেকে তিন দিন ধরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছে গ্লোব বায়োটেক।

তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের অবগত না করেই রোববার সকালে বরমী বাজারে বাকি বানর ধরতে গেলে জনরোষে পড়ে তারা।”

পরে ‘পুলিশ তাদের উদ্ধার করে’।

ঘটনার বিবরণে বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয়রা বানর ধরার খবরটি তাকে জানায়।

সেখানে গিয়ে খাঁচায় আটকানো কয়েকটি বানর দেখতে পেয়ে তিনি এই ওষুধ কম্পানির লোকজনের কাছে বানর ধরার কারণ জানতে চান।

তখন তিনি জানতে পারেন, বঙ্গভ্যাক্স টিকার কার্যকারিতা যাচাইয়ে বানর ধরার জন্য বন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি রয়েছে।

টাকা চাওয়ার এবং লুটপাটের অভিযোগ কথা অস্বীকার করে ব্যবসায়ী নেতা আবুল হাশেম বলেন, স্থানীয়রা বারণ করার পরও তারা বানর ধরা অব্যাহত রাখায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

পরে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত করে গ্লোব বায়োটেকের লোকদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এসব বানরের প্রতি স্থানীয়দের ভালোবাসার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমীর বানর। এ বানরগুলোর শত অত্যাচার অত্যাচার সহ্য করেও আমরা তাদের খাবার দেই, যত্ন করি।

“লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও প্রত্যেক বাড়ি থেকে খাবার যোগাড় করে দিই। বানরগুলোই বরমী বাজারকে মাতিয়ে রেখেছে।”

বানরগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে অজ্ঞান করায় এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে ‘মারমুখী হয়েছিল’ বলেন তিনি।

বিশ্বে মহামারী আকারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের একমাত্র ওষুধ কম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড এর টিকা আবিষ্কারের দাবি করে। তবে এর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রাণী ও মানব দেহে পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।