বুধবার ভোরে ভারী বর্ষণের মধ্যে পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর বাঁধ উপচে পানি ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস, বাজার ও অর্ধশতাধিক বাড়িতে প্রবেশ করে। আর ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর দু’কুল উপচে নালিতাবাড়ী উপজেলা পৌরশহরের শিমুলতলায় শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, “মহারশী নদীর বাঁধের কিছু অংশ অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা শহরসহ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
এ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার রাত থেকে প্রবল বর্ষণের পাশাপাশি প্রবল বেগে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর রামেরকুড়া, দীঘিরপাড় ও খৈলকুড়া এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঝিনাইগাতী সদর বাজারে প্রবেশ করে। এতে ঝিনাইগাতী বাজারসহ উপজেলা পরিষদ ভবন, ডাকঘর, সাবরেজিস্ট্রার, নলকুড়া ভূমি কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যাল, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ সরকারী কর্মকর্তাদের বাসভবন এলাকা প্লাবিত হয়। বাজারের অধিকাংশ দোকান ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া সদর ইউনিয়নের রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, রামনগর, দিঘীড়পাড়, চতল, আহাম্মদনগরসহ ১০টি এবং হাতিবান্দা ইউনিয়নের কামারপাড়া, বৈলতেল, কবিরাজপাড়াসহ পাঁচটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৩০টি পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। ঝিনাইগাতী-রাংটিয়া সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।
হাতিবান্দা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার আলী আকবর জানান, তার ইউনিয়নের অনন্ত ৫টি গ্রামে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। এতে আমন ধানের বীজতলা, সবজি ও বেশ কিছু পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানি বিভিন্ন এলাকাতে প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় ২৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত আছে।
ঝিনাইগাতী বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী শুক্রর আলী জানান, তার দোকানে পানি ঢুকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মালমালের ক্ষতি হয়েছে।
রামনগর গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, তার সাত একর জমির পুকুর পানিতে তলিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
ঝিনাইগাতী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান, ঝিনাইগাতী সদর বাজারের মসজিদ রোডসহ বাজারের একাংশে হাঁটু পানি জমেছে। বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাটে পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে, নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ, মৎস্য খামারসহ নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে। গ্রামীণ কাঁচা ও পাকা রাস্তা পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন জানান, নালিতাবাড়ী শহরের কিছু অংশসহ নালিতাবাড়ী, নয়াবিল এবং মরিচপুরান ইউনিয়নের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভাঙা বাঁধ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।