কোভিডের ঝুঁকি নিয়ে বেনাপোলে কাজ, টিকা চান কর্মীরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কাজ করছেন কাস্টম ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের আড়াই হাজার সদস্য।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 03:31 AM
Updated : 1 July 2021, 03:31 AM

তারা বলছেন, প্রতিদিনই ভারত থেকে আসা ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীদের সংস্পর্শে আসতে হয় তাদের। কাজের এমন পরিবেশ এমন যে ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বাস্তবতা নেই।

এই পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি এই বন্দরকর্মীরা।

মহামারির বছর গড়ানোর পর পরিস্থিতি যখন উন্নতির দিকে যাচ্ছিল, তখনই ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণে বাংলাদেশে আবার লকডাউনসহ কঠোর বিধি-নিষধ আরোপ হচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে নাগরিকদের চলাচল বন্ধ হলেও বাণিজ্যিক যোগাযোগ রয়েছে, ফলে স্থলবন্দরের কর্মীদের কাজ থেমে নেই।

আমদানি-রপ্তানি কাজকর্মসহ পরীক্ষণ, শুল্কায়ন, পণ্যখালাস, সরকারি রাজস্ব আহরণে শুল্কভবন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বেনাপোলের এই স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।

বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিয়ার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করে যেতে হচ্ছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের ২ হাজার ৫৭৩ জন সদস্য সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত অবধি কাজ করছেন। অথচ সরকার, প্রশাসন, মালিক পক্ষ কিংবা শুল্কভবন বা বন্দর কর্তৃপক্ষ কারও কাছ থেকেই সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, “অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বর্ডারম্যান হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের ৮০০ জনের মধ্যে ২০০ জনের একটি তালিকা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। জরুরিভাবে অন্তত তাদেরকে টিকা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।”

বর্ডারম্যান হিসেবে কপোতাক্ষী এজেন্সিজে কর্মরত আব্দুল মোমিন বলেন, তাদের সরাসরি ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের কাছে গিয়ে কাজ করতে হয়। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্ক নিয়েই এই কাজ করছেন।

তিনি বলেন, “বন্দরে কাজ শেষ করে রাতে যখন স্বজনদের কাছে যাই তখন মনে একটা ভয় কাজ করে, আমার জন্য আমার পরিবার হুমকির মুখে পড়বে নাতো?”

স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মিজানুর রহমান বিশ্বাস কাজ করেন কাস্টমস ও বন্দর অভ্যন্তরে।

তিনি বলেন, “শুল্কভবন ও বন্দরে আমাদের কাজ করতে হয়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব রাখা সম্ভব হয় না। আমদানিকারক, সিএন্ডএফ, ট্রান্সপোর্ট, ট্রাকচালক সবাই একাকার হয়ে কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করতে হয়। এদের সাথে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়।

“এখানে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি থেকেই যায়। সরকারিভাবে আমাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে অন্তত চিন্তামুক্ত ভাবে কাজ করতি পারতাম।”

সারথি এন্টারপ্রাইজের ইসরাইল হোসেন বলেন, “অফিসের তরফ থেকে আমাদেরকে শুধু মাস্ক দেওয়া হয়। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করে চলেছি।”

বন্দর কাস্টমস ও বর্ডারে কাজ করা স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন বলে স্বীকার করেন বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মামুন তরফদার।

তিনি বলেন, “ওই অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে বর্ডারম্যান হিসেবে কাজ করে এমন ২০০ জনের একটি তালিকা পেয়েছি। তারা যাতে টিকা পেতে পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের  কাছে ওই তালিকা আমরা পৌঁছে দিয়েছি।”

সরকার গত ফেব্রুয়ারিতে গণটিকাদান শুরু করলেও টিকার সঙ্কটের কারণে সেই কাজ কিছুটা থমকে গেছে। এখন মেডিকেলের শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জটিল রোগে আক্রান্তদের টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাইকে টিকা দানের আশ্বাস সরকারের রয়েছে।