রিফাত হত্যার দুবছর: বিচারে পেপারবুকের অপেক্ষা

বরগুনার আলোচিত সেই রিফাত হত্যাকাণ্ডের উচ্চ আদালতের বিচার কাজ পেপারবুক প্রস্তুতের পর গতি পাবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ আমিন উদ্দিন।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2021, 01:55 PM
Updated : 26 June 2021, 01:55 PM

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কোপায় নয়ন বন্ড বাহিনী নামে পরিচতি একদল যুবক। ওই দিন বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত।

ব্যাপক আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দুইভাগে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং বরগুনা শিশু আদালতে সম্পন্ন হয়। সাজাপ্রাপ্তা আসামিরা আপিল করায় মামলা উচ্চ আদালতে গড়ায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন বলেন, “করোনার কারণে সব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।”

রিফাত হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল এবং ডেথ রেফারেন্স দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়ার প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “পেপারবুক প্রস্তুত হলেই রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ও দ্রুত শুনানি হয় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নেব।”

স্ত্রীর সামনে রিফাতকে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়। দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে।

হত্যাকাণ্ডের পর দিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। যেখানে প্রধান সাক্ষী ছিলেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

তবে কয়েক দিনের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়। মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যায় জড়িতের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।

তার আগেই হত্যার ছয় দিন পর এ মামলার প্রধান আসামি বন্ড বাহিনী প্রধান সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

ওই বছরের ১ অক্টোবর বিকেলে ২৪ জনকে আসামি করে বরগুনার সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। এতে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ককে আসামি করা হয়।

আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারের ভার জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিচারের ভার শিশু আদালতকে দেয়।

বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি এবং বরগুনা শিশু আদালত ৮ জানুয়ারি বিচার কাজ শুরু করে। তবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতিতে আদালত বন্ধ থাকায় ৮ মার্চ থেকে ছয় মাস এ মামলার বিচার কার্যক্রমও থমকে থাকে।

আদালত খোলার পর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মিন্নিসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। বাকি চার আসামি খালাস পান। অন্য ফাঁসির আসামিরা হলেন, রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় এবং মো. হাসান।

অন্যদিকে ওই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা করে বরগুনার শিশু আদালত।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ায় ছয় আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত। এছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর করে এবং একজনকে তিনি বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পায় তিনজন কিশোর।

এসব রায়ের পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডিত সব আসামি। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় গতি হারায় এ মামলার বিচার কার্যক্রম।

এদিকে, হত্যার দুই বছর পার হলেও এখনো রিফাতের স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদেন তার মা-বাবা ও একমাত্র বোন। ছেলের কবরের পাশে প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন মা ডেইজি আক্তার।

নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, “রিফাতের শোকে আমার স্ত্রী নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী।

“এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। মিন্নির কারণে আমার সেই সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।”

রিফাতের মা ডেইজি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায় বাস্তবায়ন করা হোক।”

এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

নিহতের স্বজনদের দাবি, আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ মামলার বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।