মারধরের শিকার শরিফুল ইসলাম স্বাধীন (২২) পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ছাত্র।জেলার সদর উপজেলার পারমালন্তি গ্রামে শাজাহান আলীর ছেলে তিনি।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, “বিষয়টি আমি অবহিত। অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ কাজ করছেন। অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে গত ২০ জুন মামলা করেন বলে ওসি আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শরিফুল বলেন, “করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে যাইনি। ঘটনার দিন স্যার ডেকে পাঠালে ক্যম্পাসে যাই। এ খবর পেয়ে তারা স্যারের সামনেই মারধর শুরু করে।”
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুন এ কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলাউদ্দিন সরদার আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের ডেকে পাঠান। শরিফুল এই ডাকে ক্যম্পাসে যান।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক আলাউদ্দিন সরদার আলোচনা করার সময় সশস্ত্র কয়েকজন ক্লাসরুমে ঢুকে শরিফুলকে জোর করে পাশের এক কক্ষে নিয়ে মারপিট করে। এ সময় তারা মোবাইলফোনও ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ডাকার কথা স্বীকার করে প্রত্যক্ষদর্শী সেই শিক্ষক আলাউদ্দিন সরদার বলেন,“শ্রেণীকক্ষে কথা বলার সময় অতর্কিত কয়েকজন যুবক এসে স্বাধীনকে (শরিফুল) ধরে পাশের এক কক্ষে নিয়ে যায়।
“ঝামেলা আঁচ করতে পেরে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে অবহিত করি। স্যার এসে কি করেছেন আমার জানা নেই।”
কলেজে মারধরের পর সন্ত্রাসীরা পাশের জুবলি ট্যাংক মার্কেটের ছাদে নিয়ে আবার মারপিট করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, অধ্যক্ষের এমন আচরণ প্রসঙ্গে আহত শরিফুল জানান, গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেন। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে, ওয়েব সাইটে কোনো নোটিশ না দিয়েই অধ্যক্ষ তার এক ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে ওই টাকা বিতরণ করেন।
এ অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তারা। এতে অধ্যক্ষ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাছাড়া স্মাকলিপিতে স্বাক্ষর করায় এইচএম সাব্বির নামের তার এক সহপাঠীকে সন্ত্রাসীরা উলঙ্গ করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করেছিল বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে অধ্যক্ষ বাহেজ উদ্দিন বলেন, “কলেজে ঝামেলার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় স্বাধীনকে মারপিটের বিষয়ে জানতে চাইলে সে কিছু বলেনি।
“ওই শিক্ষার্থীরা পূর্ব পরিচিত এবং বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। তারা স্বেচ্ছায় এক সাথে ক্যম্পাস থেকে বেরিয়ে গেছে।”
সেদিন কলেজ ক্যম্পাসে মারপিটের এবং গত বছরেরে উপবৃত্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও অসত্য বলে দাবি করেন এ অধ্যক্ষ।
এ মামলার আসামিদের পরিচয়ে শরিফুল বলেন, মারধরে নেতৃত্ব দেন বুলবুল কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুমন হোসেন। আরও ছিলেন এ কলেজ কমিটির সহ-সভাপতি রাজিব হোসেন আলিফ, সদ্য বিলুপ্ত সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাব্বির আহমেদ জয়, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তপু রায়হান, মইনুল হাসান মুন্নাসহ ৮ থেকে ৯ জন।
এদিকে, শরিফুলের মার খাওয়ার কথা স্বীকার করেন এই কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুমন হোসেন। তবে তিনি মারধরে সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন।
সুমন বলেন, “শরিফুল ইসলাম স্বাধীন কলেজের একটি মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই জেরে তাকে কিছু জুনিয়র শিক্ষার্থী পিটিয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমি এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই।”
জুবলি ট্যাংক মার্কেটের ছাদে দ্বিতীয় দফায় মারধরের পর তাকে ফেলে দেয়। এ সময় পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে বিশ্রামে আছেন বলে জানান এই আহত ছাত্র।