সিলেটে স্ত্রী-সন্তানদের গৃহকর্তাই ‘হত্যা করেন’, বলছে পুলিশ

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ‘পারিবারিক কলহের’ জেরে গৃহকর্তা হিফজুর রহমানই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ‘বঁটি দিয়ে কুপিয়ে’ হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সিলেট প্রতিনিধি বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2021, 11:12 AM
Updated : 19 June 2021, 11:12 AM

শনিবার দুপুরে জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওই দিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের আলামত পাওয়া যায়নি।

“স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।”

বুধবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের ঘর থেকে তার স্ত্রী আলিমা বেগম (৩২), ১০ বছরের ছেলে মিজান আহমদ ও তিন বছরের মেয়ে তানিশা আক্তারের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

একই সময় গৃহকর্তা হিফজুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার রাতে হিফজুরের আরেক ছেলে আফসান আহমদ (৫) তার মামার বাড়িতে ছিল। সে সুস্থ আছে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এবং বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহের তীর এখন আহত হিফজুরের দিকেই।

হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, “বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি, দা দিয়েই খুন করত না।

“বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।”

হিফুজরের আঘাত ‘একেবারেই সামান্য’ জানিয়ে তিনি বলেন, “শরীরের কিছু জায়গায় চামড়া ছিলে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা, স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি।

“হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। প্রথমে আমরা তা বুঝতে পারিনি। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর বুঝা যায় তার আঘাত গুরুতর নয়।”

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী সন্তানদের মরদেহের হাত-পা পরিষ্কার ছিল। অথচ তার পায়ে বালি ও কাদা ছিল। এতে বুঝা যাচ্ছে তিনি রাতে ঘুমাননি।

হিফজুর দোকানে দোকানে পান বিক্রি করেন জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “প্রতিরাত পানের টাকা সংগ্রহ করেন হিফজুর। কিন্তু ঘটনার দিন রাতে তিনি তার সহাকারীর সঙ্গে পানের বকেয়া টাকা তুলতে যাননি।”

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার রাতে হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগমের বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।