বেনাপোল বন্দর: ‘ঢিলেঢালা’ স্বাস্থ্যবিধিতে বাড়ছে ঝুঁকি

বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এবং সীমান্তের ওপারে ভারতের পেট্রাপোলের মধ্যে পারাপারকারী ট্রাক ড্রাইভার ও তাদের সহকারীরা যেমন, তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরিবহনকর্মীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ উঠছে।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2021, 07:15 PM
Updated : 17 June 2021, 07:58 PM

স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় ট্রাক চালক ও তাদের সহকারীরা বন্দর এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। সবাই যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন, তাও নয়।

ভারত থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ঢোকা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিন নিয়ে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যুক্ত শ্রমিক ও পরিবহন কর্মীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিয়ম অনেকটাই ‘ঢিলেঢালা’ হয়ে আসতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশি ট্রাক চালক সহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ঢুকলে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়।

“এক সময় মাস্ক ও পিপিই বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু এখন কেউ কিছু বলে না বলে আমরাও ব্যবহার বাদ দিছি।“

যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেনাপোল বন্দর ও তার আশেপাশে করোনা প্রতিরোধে স্পেশাল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

“ভারতীয় ট্রাক চালকরা যাতে বন্দরের বাইরে খোলামেলা ঘোরাঘুরি করতে না পারেন সেজন্য বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে।“

ভারতীয় ট্রাকচালকদের বেনাপোল বন্দরের বাইরে চলাচল ঠেকাতে চলতি মাসের শুরুর দিকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

প্রতিদিন পেট্রাপোল বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে যশোরের বেনাপোলে ঢোকে সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ ট্রাক। আবার বেনাপোল দিয়ে দুইশ থেকে তিনশ ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে যায় ভারতে।

এর বাইরেও প্রতিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় সহস্রাধিক ট্রাক বন্দরে যাতায়াত করে।

এসব ট্রাকচালক ও তার সহকারীদের অধিকাংশই করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার থেকে শুরু করে যথাযথভাবে অন্যান্য আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না বলে বেশি শোনা গেছে।

অথচ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিবেশি দেশটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যস্ততম এই স্থলবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারও সতর্কতা হিসেবে ভারতে পাওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে ২৬ এপ্রিল থেকে স্থলপথে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দিয়েছে।

যদিও ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন। এক্ষেত্রে তাদের থাকতে হচ্ছে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে।

ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টিনসহ অন্যান্য নিয়ম কঠোরভাবেই অনুসরণ করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে বন্দরের শ্রমিক ও পরিবহন কর্মীদের বেলায় একটু ‘শিথিলতা’ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।

ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন পণ্য বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত কাস্টমস ও বন্দরের সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত হ্যান্ডেলিং শ্রমিক, সিএন্ডএফ ও ট্রান্সপোর্ট কর্মচারি এবং ট্রাকচালকসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানি ও রপ্তানিকারক আমিনুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পণ্য বোঝাই ভারতীয় ট্রাক বন্দরে ঢোকার পর অনেক ট্রাকের পণ্য খালাসে এক সপ্তাহেরও বেশি লেগে যায়। এক সময় এসব ট্রাক চালক বন্দরের বাইরে, চায়ের দোকান ও বাজারে অবাধে ঘোরাঘুরি করতেন।

“তবে বিজিবির নজরদারি বাড়ানোর কারণে সেটা কিছুটা কমেছে। তবে বন্দর অভ্যন্তরে বাংলাদেশিদের সাথে তাদের মেলামেশা স্বাভাবিক রয়েছে। ওইসব ট্রাক চালক ও তাদের সহকারীদের মাধ্যমে সংক্রমণের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।“

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, “ভারতের চালকরা আসছেন। বাংলাদেশের চালকরাও ওপারে পেট্রাপোল বন্দরে যাচ্ছেন। এদের মাধ্যমে সহজে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।

তিনি বন্দরে জরুরিভিত্তিতে কোভিডবিষয়ক সব ধরনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।

স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি বাইরের সড়ক-মহাসড়কে বিজিবি দিনরাত টহল দিচ্ছেন জানিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদার বলেন, “দু'দেশের মধ্যে লকডাউন থাকলেও বন্দরে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ন্ত্রণে সতর্ক রয়েছি।

“ভারতীয় ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে ও থার্মাল স্ক্যানারে চালক-সহকারীদের তাপমাত্রা যাচাইয়ের পরই তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।“

গতবছর গত ২৩ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়।

পরে ৭৭ দিন পর ৭ জুন আবার পণ্য পরিবহন শুরু হয়। এক্ষেত্রে এখন নেওয়া হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। মহামারীকালে সব মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে ১০৬ দিন বন্ধ ছিল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী পারপার বন্ধ করে দেয়। তবে পণ্য পরিবহন অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন