শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সদর উপজেলার কলাবাড়ি এবং ঘটকচরে কয়েক দফা সংঘর্ষে দুটি ব্যাংক, অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, বেশ কয়েকটি দোকান এবং বসতঘর ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে বিকেল ৫টায় মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেল বলেন, “বিরাজমান দুপক্ষের বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপক্ষকে আমরা একত্রিত হতে দিইনি, ফলে মারামারি হয়নি।
“আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও, যাওয়ার সময় কিছু বিক্ষুদ্ধ লোক দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে।
“যা কয়েকটি সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, দুপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগও দেয়নি।
সম্প্রতি রাজৈরে এক অনুষ্ঠানে সাংসদ শাজাহান খান এবং তার বাবা আছমত আলী খানকে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার এক বক্তব্যকে ঘিরে বিবাদের সৃষ্টি। এরই বাদানুবাদে এক সপ্তাহ ধরে শাজাহান খানের সমর্থক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, তারই জেরে শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কলাবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভের আয়োজন করে শাজাহান খান সমর্থিত কর্মীরা।
একই সময় ওই স্থানে শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার সমর্থকরা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। এতে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরেই উভয়পক্ষ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এতে তিন পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ সময় ঘটকচর বাসস্ট্যান্ডের পাশের সরদার মার্কেটে ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানান তারা।
ভাঙচুরের শিকার সরদার মার্কেটের স্বত্বাধিকারী, কেন্দুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কেন্দুয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সোহরাব হোসেন সরদার বলেন, “জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল খান, এমপিপুত্র আসিবুর রহমান খান কেন্দুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল মাতুব্বরের লোকজন নিয়ে আমার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।”
সংঘর্ষের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, “আমি সাংসদ শাজাহান খানের বাবাকে নিয়ে যে কথা বলেছি। তার ভুল বা সঠিক কী ছিল সেই ব্যাখ্যা তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন। কিন্তু সাংসদ সেটা না করে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছে। তার সমর্থকদের দিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করেছে।
“আজ যে হামলা ভাঙচুর হয়েছে তা সাংসদের পুত্র ও ভাতিজার নেতৃত্বে বিএনপির লোকজনদের দ্বারা হয়েছে। হামলায় একজন মুক্তিযোদ্ধার মার্কেট ও তার বসতঘর ভাঙচুর করেছে। এর দায়ভার সাংসদের নিতে হবে।”
এ বিষয় জানতে চাইলে সাংসদ শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার বাবাকে নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা আমার ও মাদারীপুরবাসীর জন্য অপমানজনক। আমি রাজনৈতিকভাবে এলাকার জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এর প্রতিবাদ করে যাব।
“আমার ছেলে ও ভাতিজাসহ আমার পরিবারের স্বজনরা আজ তারই অংশ হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিতে কলাবাড়ি যায়। সেখানে তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে ঢিল ছোঁড়া হয়। এরপরই ঘটকচর এলাকায় আসার পরে আবারও তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়া হয়। পরে সোহরাব সরদারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হলে আমার ছেলে ও ভাতিজারা তা প্রতিরোধ করে। সেখানে তারা কোনো ভাঙচুর ও মারামারি করতে যায়নি।”