জাবিতে অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা, ‘দ্বিমত’ ইউজিসির

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে অনলাইন পরীক্ষার আয়োজন চলছে। তবে অনলাইনে নিয়োগ পরীক্ষা ‘সম্ভব নয়’ বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক সদস্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2021, 05:46 PM
Updated : 10 June 2021, 05:46 PM

সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা পদে ৪৭ জনকে নিয়োগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দর্শন বিভাগে ছয়জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এই ছয় পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৫৭ জন প্রার্থী। আগামী শনিবার ‘অনলাইনে’ তাদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে অনলাইনে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সদস্য (ইউজিসি) ড. দিল আফরোজা বেগম।

তিনি বলেন, “অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ কোনোভাবেই হতে পারে না। বোর্ডে একজন প্রার্থীকে সামনাসামনি দেখতে হয়, তার সার্টিফিকেট দেখতে হয়। অনলাইনে কীভাবে সম্ভব? আমরা কেবল বলেছি অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে। তাও অনেক নীতিমালা উল্লেখ করেছি।”

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের নতুন ছয় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধে হাই কোর্টে রিট হয়েছে।

বৃহস্পতিবর বিভাগের চারজন শিক্ষক এ রিট করেন। পাশাপাশি নিয়োগ বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন আট জন শিক্ষক।

রিটকারী শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক আবদুছ ছাত্তার ও সহযোগী অধ্যাপক জাকির হোসেন।

এর আগে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বরাবর নিয়োগ বন্ধে লিখিত আবেদন করেন তারা।

আবেদনে বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় শিক্ষাপর্ষদের সভা আহ্বানের ‘নীতি লঙ্ঘন’ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিভাগের সভাপতি তার ‘পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ’ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভাগীয় নীতি লঙ্ঘন করেছেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, এক বছরের বেশি সময় ধরে সরাসরি ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। নানা কারণে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাইরে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছয় শিক্ষক নিয়োগ অপ্রয়োজনীয়ই নয় বরং দুরভিসন্ধিমূলক।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এভাবে শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা বিভাগে নজিরবিহীন।

“অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কোনো নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। এছাড়া প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ নেই। এরকম অস্পষ্টতার মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ হতে পারে না।”

অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সভাপতি মোস্তফা নাজমুল মানছুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী শনিবারের (১২ জুন) পরীক্ষা অনলাইনেই হবে।”

তিনি বলেন, “বিভাগে বর্তমানে সক্রিয় শিক্ষক সংখ্যা ১৭ জন। ২০১১ সালের পর থেকে বিভাগে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক অবসরে এবং শিক্ষা ছুটিতে গিয়েছেন। ফলে বর্তমান কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ১৭। এই সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান সম্ভব নয় বলেই নতুন করে চাহিদার কথা জানানো হয়।”

কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, “দর্শন বিভাগের নিয়োগ বন্ধ করতে আমার কাছে একটি লিগ্যাল নোটিশ এসেছে। তবে বিভাগটিতে এখন দুইটি পক্ষ আছে। আমার জন্য এখানে বিষয়টিতে পক্ষ-বিপক্ষ নেওয়া খুব কঠিন। আর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ডিনের কোনো ভূমিকা থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় দেখে থাকে।”