দেশে বজ্রপাতে ১৭ প্রাণহানি

দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে ১৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 06:05 PM
Updated : 6 June 2021, 06:14 PM

রোববার চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফেনী, টাঙ্গাইল, রংপুর ও মুন্সীগঞ্জে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামে ছয় জন, সিরাজগঞ্জে পাঁচ জন, টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই জন করে এবং রংপুর ও মুন্সীগঞ্জে একজন করে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চট্টগ্রাম ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এই তথ্য উঠে এসেছে।   

চট্টগ্রাম

ভারি বর্ষণের মধ্যে চট্টগ্রামে বজ্রপাতে দুই নারীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছে আরও চার জন।

ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় দুই জন করে এবং বোয়ালখালী ও মিরসরাইয়ে একজন করে মারা যান।

মৃতরা হলেন- সীতাকুণ্ড উপজেলায় আব্দুল জলিল (৪০) ও এসকান্দার আলী (৬০), ফটিকছড়িতে লাকী দাশ (৩৮) ও ভানু শীল (৪০), মিরসরাইয়ে স্কুল শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন (১৬) ও বোয়ালখালীতে মো. জাহাঙ্গীর (৩৯)। 

আহতরা হলেন- মালতী রানী দাশ (৫০) ও শোভা রানী দাশ (৪৫), মোশারফ হোসেন (৫০) ও বদিউজ্জামান (১৮)।

তাদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন স্কুল শিক্ষার্থী এবং আব্দুল জলিল শিপ ইয়ার্ড শ্রমিক।

সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনির আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রিমিয়ার শিপ ইয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন জলিল। বিকালে বজ্রপাতে তিনি মারা যান।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, প্রিমিয়ার শিপ ইয়ার্ডের গেইটে দাঁড়ানো ছিলেন আব্দুল জলিল। এসময় বজ্রপাতে তিনি আহত হন এবং তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।”

উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুপ্তাখালী বাঁধে এসকান্দার আলী নামে একজন বজ্রপাতে মারা যান এবং বদিউজ্জামান নামে একজন আহত হন বলে জানান সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুরউদ্দিন রাশেদ।

তিনি বলেন, বিকালে দুইজনকে হাসপাতালে আনা হলে এসকান্দার আলীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এসকান্দার ও বদিউজ্জামান বিকালে গুপ্তাখালী বেড়িবাঁধের কাছ থেকে গরু আনতে গিয়েছিলেন।

রোববার সকালে ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের মানিকপুর ওয়ার্ডের ডলুর পাড়ায় বজ্রপাতে লাকী দাশ ও ভানু শীল নামে দুই নারী মারা যান বলে ফটিকছড়ি থানার ওসি সো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে বৃষ্টি শুরুর আগে লাকী, ভানু শীল, মালতী রানী, শোভা রানী ক্ষেতে মরিচ তুলতে গিয়েছিলেন। এ সময় সেখানে বজ্রপাত হলে তারা দগ্ধ হন।

“চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে লাকী ও ভানুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অন্য দুইজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

হতাহতরা সবাই প্রতিবেশী বলে জানান ওসি রবিউল।

এদিকে মিরসরাই উপজেলার সায়েরখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ডোমখালী গ্রামে সাজ্জাদ হোসেন নামে ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মারা যায় বলে জানান মিরসরাই থানার এসআই আতাউর রহমান।

সায়েরখালী পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী জানান, বাবা মোশারফ হোসেনের সঙ্গে ধানের চারা রোপণ করছিলেন সাজ্জাদ। বজ্রপাতে তার বাবাও আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় পাহাড়ে লেবু বাগানে কাজ করার সময় জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন মারা যান বলে জানান বোয়ালখালী থানার এসআই মো. মোস্তফা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাহাঙ্গীরকে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের তিন উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামের আমানত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৬), নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের আলহাজ বাবুর্চি (৫০), উল্লাপাড়ার বাগমারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪৫), উধুনিয়া ইউনিয়নের আগদিঘল গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে স্কুলছাত্র ফরিদুল ইসলাম (১৫) এবং বেলকুচির চরশমেসপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর স্ত্রী লাইলী থাতুন (৩৫)।

শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম জানান, বিকালে আব্দুল্লাহ বৃষ্টির মধ্যে চর আঙ্গারু গ্রামে বাড়ির পাশে মাঠে ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

একই উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, বিকালে আলহাজ বাবুর্চি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশেই মাঠে ধান শুকানোর কাজ করছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, বিকালে ফরিদুল ইসলাম মাঠে ধান কাটছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে ধান কাটা বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তিনি মারা যান।

একই উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফি কামাল শফি জানান, বিকালে পাশের বাঙ্গালা ইউনিয়নের দড়িয়াল বিল থেকে হাঁসের বাথান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে রফিকুল মারা যান। এ সময় একটি গরুও মারা গেছে।

অপরদিকে, বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান জানান, সন্ধ্যায় চর শমেসপুর গ্রামে বাড়ির পাশের মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে লাইলী খাতুন মারা গেছেন।

ফেনী

ফেনীর সোনাগাজীতে বজ্রপাতে এক কিশোরী ও এক শিশু নিহত হয়েছে; যারা সম্পর্কে চাচাত ভাইবোন। 

রোববার সকালে উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের আনু ফরাজী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম পলাশ জানান।

নিহতরা হল আলমপুর গ্রামের আনু ফরাজী বাড়ির মোহাম্মদ সোলেমানের মেয়ে তামান্না আক্তার (১৪) ও একই বাড়ির বাহার উল্লাহর ছেলে আল আমিন (৬)। তারা স্থানীয় কাটাসিলা সমদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।

নিহতদের পরিবারের বরাতে ওসি বলেন, সকালে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে তামান্না ও আলামিন এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে আহত হয়। বাড়ির লোকজন তাদের সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, দুই বোনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে স্বজনরা তাদের লাশ বাড়ি নিয়ে যান।

টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের নাগরপুরের দুই স্থানে বজ্রপাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার বিকালে উপজেলার ভাদ্রা এবং বেকড়া ইউনিয়নে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

মৃতরা হলেন, উপজেলার ভাদ্রা ইউনিয়নের গাংবিহালী গ্রামের মো. বক্তার খানের ছেলে আলমাছ খান (৫৫) এবং বেকড়া ইউনিয়নের বেকড়া মধ্য পাড়া গ্রামের পলান মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া (৫৩)।

নাগরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার এ দুটি মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আলমাছ খান বিকালে গাংবিহালী চক থেকে খড় শুকাচ্ছিলেন। বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হলে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

অপর দিকে বেকড়া মধ্যপাড়ার সোনা মিয়া বিকালে তার বাড়ির উঠানে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়।

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে খেলার সময় এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরও দুই জন।

রোববার বিকাল ৩টায় উপজেলার শেখরনগর মাঠে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

নিহত অপুর্ব বর্মন (১৭) শেখরনগর জেলেপাড়া গ্রামের স্বপন বর্মনের ছেলে এবং আলী আজগর এন্ড আব্দুল্লাহ কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।  

আহত পরিচয় ও অপু বর্মনও একই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শেখরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম এবং শেখরনগর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. নাসির শেখ জানান, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে স্থানীয় রায় বাহাদুর শ্রীনাথ ইনস্টিটিউশন স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলছিলেন একদল তরুণ। ওই সময় বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

রংপুর

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আমিনুর ইসলাম (৩৭) ওই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে।

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহারাব আলী (রাজু) বলেন, “বজ্রপাতে আমিনুর ইসলাম নামের এক কৃষক বিকালে বজ্রপাতে মারা গেছেন। আমি উপজেলা কর্মকর্তাকে লিখিত পাঠিয়েছি।”

কোলকোন্দ ইউপি সচিব এরশাদ আলম শাহীন জানান, সকালে পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে কাজ করতে যান আমিনুল ইসলাম। কাজ করা অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তিনি পাটক্ষেত থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে বজ্রপাতে তিনি মারা যান।
গংগাচড়া মডেল থানার ওসি সুশান্ত কুমার জানান, আমিনুর রহমান নামের এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। তাদের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছেন।