খাদ্য চাওয়ায় সেই ইউএনও’র শাস্তি: দায় পড়ল ইউপি সদস্যের ঘাড়ে

জাতীয় হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এ ফোন করে খাদ্য সহায়তা চাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে সেই ইউএনও’র শাস্তিদানের দায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্থানীয় ইউপি সদস্যের ওপর চাপানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2021, 01:57 PM
Updated : 5 June 2021, 03:31 PM

শনিবার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, রোববার এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও দুইদন আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

এতে বলা হয়েছে ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (ইউপি সদস্য) ভুল তথ্যের কারণে ওই ঘটনা ঘটে।’

ইউপি সদস্যের ওপর পুরো দোষ চাপিয়ে দিয়ে ইউএনও আরিফা জহুরাকে দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি ফরিদ আহমেদের সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল।

“স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভুল তথ্যের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুধু তাকেই দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।”

বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটি আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ কাছে পাঁচ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে ১২৬ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট ও ভিডিও চিত্র দাখিল করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটি ৩৩৩ মানবিক খাদ্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু জনপ্রতিনিধির তথ্যের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম এবং প্রয়োজনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হবে।

এ তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, “আমার ভুল কীভাবে হল?

ইউএনও তো নিজে স্শরীরে এসে শাস্তি দিলেন এবং খাবার দিলেন।

“আমি যদি ইউএনওকে ভুল তথ্য দিয়ে থাকি, তিনি তো স্শরীরে এসেছেন, তাহলে তিনি দেখবেন না? উনি (ইউএনও) যদি না এসে এই শাস্তি দিতেন তাহলে আমাকে দায়ী করতে পারত।”

সেদিন ইউএনও আসার খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ‘বারবার ফরিদ আহমেদের বিষয়টি বলার কথা দাবি করে তিনি বলেন বলেন, ইউএনও নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তাকে বিষয়টি দেকভালের নির্দেশ দেন।

“আমি ফরিদ আহমেদের বিষয়টি বারবার জানিয়েছি কিন্তু ইউএনও স্যার আমার কথা শোনেন নাই। আমি ফরিদ আহমেদকে ১০ হাজার টাকাও দিয়েছি। ওই প্রতিবেদনে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।”

গত ২১ মে সরকারি তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩ ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দেভোগ এলাকার ফরিদ আহমেদ।

খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন জানতে পারেন ওই ব্যক্তি চার তলা বাড়ির এবং হোসিয়ারী কারখানার মালিক।

তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও আরিফা জহুরা তাকে ৩৩৩ ফোন করে অযথা হয়রানি এবং সরকারি সময় নষ্ট করার দায়ে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোককে খাদ্য সহায়তা করার জন্য দুদিন সময় বেঁধে দিয়ে আসেন। এই খাদ্য সহায়তা না দিলে ফরিদের তিন মাসের জেল হবে।

বিপডাকে পড়ে ফরিদ তার বড় মেয়ের স্বর্ণলঙ্কার বন্ধক রেখে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১০০ প্যাকেট খাদ্য জোগাড় করলে ইউএনও’র উপস্থিতিতে সেগুলো বিতরণ করা হয়।

পরে ফরিদ আহমেদের আর্থিক অবস্থা বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।

পরে প্রশাসনের অনুরোধে স্থানীয় পশ্চিম দেওভোগ পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা শাহীনূর আলম ফরিদ আহমেদকে ৬০ হাজার টাকা দেন।

ফরিদ আহমেদের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি একটি হোসিয়ারী কারখানায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন।