বেঙ্গালুরু কাণ্ড: আশরাফুল কয়েকজন তরুণীকে গ্রামে এনেছিলেন

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আশরাফুল ছয় মাস আগে কয়েকজন মেয়েকে ঝিনাইদহে তার গ্রামের বাড়ি এনেছিলেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

ঝিনাইদহ  প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2021, 03:43 PM
Updated : 2 June 2021, 03:43 PM

বেঙ্গালুরুতে সম্প্রতি বাংলাদেশের এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। শারীরিক নির্যাতনের সময় ২২ বছরের ওই তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণও করা হয় বলে এনডিটিভি জানায়।

ওই ঘটনায় ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে টিকটক হৃদয় বাবুসহ দুজন পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ঘটনায় হৃদয়সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত তরুণীর বাবা।

মানবপাচার চক্রের মূল ব্যক্তি আশরাফুল ইসলাম রাফি

মানবপাচারের এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে সম্প্রতি ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা ও র‌্যাব-৩ গ্রেপ্তার করে, যাদের একজন হলেন আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে রাফি।

আশরাফুল ইসলাম মণ্ডল ওরফে রাফি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নাদপাড়া গ্রামের আয়েন উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে।

গ্রামবাসী জানান, ৫/৬ মাস আগে আশরাফুল ভারত থেকে বাড়ি এসেছিলেন। তখন তিনি ৪/৫ জন তরুণীকে সঙ্গে করে গ্রামে নিয়ে আসেন। তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেছেন। পরে গ্রামের লোকজন প্রতিবাদ করলে চলে যান।

এরপর গত ১২ মে আবার বাড়ি আসেন। তখন নতুন একটি মোটরসাইকেল কিনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে ধরে ঝিনাইদহ সদরে কোয়ারেন্টিনে পাঠায়।

কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় গত রোববার ঢাকা থেকে আসা র‌্যাবের একটি টিম তাকে আটক করে বলে আশরাফুলের স্ত্রী বন্যা খাতুন জানান।

এলাকাবাসী জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান আশরাফুল গ্রামের মাদ্রসায় পড়াশুনা করতেন। দিনমজুরের কাজও করতেন। এছাড়া গান-বাজনাও করনে। পরে এক সময় ঢাকা চলে যান; সেখান থেকে যান ভারতের বেঙ্গালুরু। বছরখানেক বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এরপর ফের বাড়ি আসা-যাওয়া করতে থাকেন।

তিনি মা-বাবা ও স্ত্রীকেও বেঙ্গালুরু বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের নাদপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. ওয়াজেদ আলি বলেন, ছয় মাস আগে গ্রামে ৪/৫ জন তরুণী নিয়ে আসেন আশরাফুল। তাদের সাজিয়ে বিভিন্ন স্থানে শুটিং করে বেড়ান। তাদের চালচলন গ্রামবাসীর ভালো না লাগায় তারা প্রতিবাদ জানান; পরে তিনি ওই মেয়েদের নিয়ে চলে যান।

“বাড়িতে আসার পর দামি একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। জমি কেনারও চেষ্টা করছিলেন।”

গ্রামে আশরাফুলে পাকা বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও ওয়াশিং মেশিন রয়েছে।

আশরাফুলের স্ত্রী বন্যা খাতুন জানান, তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে রয়েছে। তিনি দুই বার বেঙ্গালুরু বেড়াতে গিয়েছেন। সেখানে তার স্বামী আশরাফুল ভাড়া বাসায় থাকতেন।  

আশরাফুলের মা সখিনা বেগম বলেন, তার ছেলে প্রতি মাসে বিকাশের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন।

আশরাফুলের বাবা আয়েন উদ্দিন মণ্ডল বলেন, তিনি ও তার স্ত্রীকে ছেলে বেঙ্গালুরু বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি ভাড়া ভাসায় থাকতেন আশরাফুল। ছেলে সেখান কী কাজ করতেন জানেন না। তবে ছেলে বলতেন তার গ্যারেজ আছে এবং সেখানে গাড়ি চালান।

মাসে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতেন বলে আয়েন উদ্দিন জানান।

আশরাফুলের প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তার জানান, রোববার সকালে ঢাকা থেকে র‌্যাবের একটি টিম আশরাফুলের বাড়ি আসে। তখন তিনি বাড়ি ছিলেন না। এ সময় তার ঘর খেকে স্ত্রী বন্যার একটি পাসপোর্ট, দুইটি পেন ড্রাইভ ও কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড জব্দ করে নিয়ে যায়। তার স্ত্রীকেও র‌্যাব নিয়ে যায়। বিকালে স্ত্রীকে আবার বাড়ি দিয়ে গেছে।