বাগেরহাটে নয় মামলার আসামি ‘বাঘ হাবিব’ গ্রেপ্তার

বন্যপ্রাণী পাচারের অন্তত নয় মামলার এক আসামি বাগেরহাটে গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাকে স্থানীয়রা ‘বাঘ হাবিব’ বলে চেনে।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2021, 02:36 PM
Updated : 31 May 2021, 02:36 PM

গত শুক্রবার (২৮ মে) গভীর রাতে সোনাতলা গ্রাম থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হাবিব তালুকদার ওরফে বাঘ হাবিব (৫০) বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কদম আলী হাওলাদারের ছেলে।

হাবিব বনবিভাগের তালিকাভুক্ত বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।

তবে এলাকার মানুষের ভাষ্য, নিজেকে বাঘ শিকারি বলে পরিচয় দেওয়ায় তাকে স্থানীয়রা ‘বাঘ হাবিব’ বলে চেনে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাবিবের বিরুদ্ধে বণ্যপ্রাণী পাচার করাসহ বন আইনে বাগেরহাটে আটটি এবং পিরোজপুরে একটি নিয়ে মোট নয়টি মামলা রয়েছে।

“হাবিব বনবিভাগের তালিকাভুক্ত বণ্যপ্রাণী পাচারকারী দলের সদস্য। হাবিব ধূর্ত প্রকৃতির। গত এক বছরে আমরা তাকে ধরতে অন্তত চার বার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাই। কিন্তু কীভাবে যেন সে টের পেয়ে আগেই পালিয়ে যায়। সে এই প্রথমবার ধরা পড়ল।”

জয়নাল বলেন, হাবিব তার এলাকার বিভিন্ন বন্ধু ও পরিচিতজনের কাছে বলে থাকে সে বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনের অন্তত ৩২টি বাঘ হত্যা করেছে বলে বিভিন্ন জন বলেছে। এরমধ্যে ১৯টি নাকি নারী বাঘ।

“এই রেঞ্জে চাকরি করতে আসার পর থেকে হাবিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শুনে আসছি। হাবিবের এক ছেলে এবং জামাতাও বণ্যপ্রাণী শিকারি। তাদের বিরুদ্ধেও বনবিভাগের একাধিক মামলা রয়েছে।”

জয়নাল আবেদিন বলেন, ছয় মাস আগে তাদের হরিণ শিকারের ফাঁদ, নৌকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা তাকে যেহেতু কখনও হাতেনাতে ধরতে পারিনি তাই বাঘ হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

“হাবিবের সাথে সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণী পাচারকারী চক্রের সদস্যদের একটা যোগাযোগ রয়েছে। সে ওই চক্রের সাথে যোগাযোগ রেখে বনের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে।”

সোনাতলা গ্রামের খলিল শেখ ও আলম শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাবিব পেশায় একজন বনজীবী। তিনি সোনাতলা গ্রামে ‘বাঘ হাবিব’ নামে পরিচিত। তাকে অনেকেই ‘বাঘ হাবিব’ বলে ডাকে।

তারা জানান, বনের পাশে বাড়ি হওয়ায় তিনি প্রায়ই বনে ঢোকেন; কখনও বৈধভাবে কখনও অবৈধভাবে। সুন্দরবনের সব জায়গা তার চেনা জানা।

খলিল বলেন, “হঠাৎ হঠাৎ আমরা তাকে দেখতে পাই। গত কয়েক বছর ধরে সে বনের বাঘ হত্যা করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। সে সুন্দরবনের অন্তত ৩২টি বাঘ হত্যা করেছে আমাদের কাছে দাবি করেছে। এর মধ্যে ১৯টি নারী বাঘ ছিল বলেও তার দাবি।”

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্র রয়েছে। বাঘ ও হরিণ শিকার করে তারা দেশ-বিদেশে পাচার করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বাঘের চামড়াসহ ধরাও পড়েছে।

“শরণখোলার সোনাতলা গ্রামের হাবিব তালুকদার নামে যে ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তার বিষয়ে যে তথ্য বেরিয়ে আসছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে পুলিশের বড় অর্জন হয়েছে। এই ব্যক্তির তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তাহলে কারা কারা বণ্যপ্রাণী হত্যা বা পাচারের সাথে জড়িত তা বেরিয়ে আসবে।”

শরণখোলা থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান বলেন, হাবিব তালুকদারের নামে বনবিভাগের মামলায় শরণখোলা থানায় তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। হাবিব গোপনে হাঠৎ হঠাৎ এলাকায় আসেন আবার গোপনে ফিরে যান। কোনোভাবেই তাকে ধরা যাচ্ছিল না।

“তাকে ধরতে ওই এলাকায় সোর্স নিয়োগ করি। সোর্সের দেওয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাবিবকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।”

আদালতে হাজির করার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন।