গাইবান্ধায় নদে বিলীন ‘অর্ধশত’ ঘর, নেই সরকারি পরিকল্পনা

“অ্যাকনা ঘর আচিলো, তাও তিনদিন আগোত নদী গিলি খাছে, নদী ভাঙার হাত থাকি হামার ঘরোক বাঁচাও” বললেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গ্রামের নবীজান বেওয়া (৬০)।

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2021, 02:50 PM
Updated : 30 May 2021, 02:50 PM

রোববার সকালে একই গ্রামের কৃষক আবদুল বাছেত মিয়া (৫৫) জানান, গত দশ দিনে তার পাঁচবিঘা জমি নদীতে তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ নদ থেকে দূরে নতুন করে একচালা ঘর তুলছেন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়া দেড় শতাধিক মানুষ সরকারি জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নলকূপ বিলীন হওয়ায় খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে।

তারা বলছেন, বর্ষা শুরু হতে না হতেই দফায় দফায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে গত দশদিনে কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া ও খারজানি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘড়বাড়ি, ৫০ একর আবাদি জমি এবং অনেক গাছ বিলীন হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য ঘরবাড়ি হুমকির মুখে।

তবে তাদের রক্ষায় সরকারি কোনো পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা।

কুন্দেরপাড়া গ্রামের কৃষক হাসমত আলী (৪৫) বলেন, গত দশদিনে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে আমার তিনটি ঘর ও বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ঘরে থাকা সাতমণ ধান ভেসে গেছে কিন্তু ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

পার্শ্ববর্তী খারজানি গ্রামের কৃষক আবদুল ছালাম (৫০) বলেন, “এ্যাক বচর আগোত হামরা গেরেসতো আচিনো। হামার ঘরে জমাজমি, বাড়ি ভিটা সগি আচিলো। নদী ভাঙি হামরা ঘরে একুন কিচুই নাই। কামলার কাম না করলে পেটোত ভাত যায় না।

“মানসের জাগাত এ্যাকনা ঘর তুলি আচিনো, তাক সাতদিন আগে ভাঙি গেচে। তকন থাকি বানদোত (বাঁধে) ছাপরা (একচালা ঘর) তুলি আচি।”

খারজানি গ্রামের কৃষাণী আয়না বেগম (৫৫) জানান, নদের ভাঙনে তার চারটি টিনের ঘর, বসতভিটা ও ছয়বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।

এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্পদিনের মধ্যে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে শঙ্কা তার।

কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বলেন, দফায় দফায় বর্ষণ ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ২-৩ ফুট পরিমাণ এলাকা ভাঙছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।     

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, কুন্দেরপাড়া ও খারজানি গ্রাম দুইটি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে অবস্থিত। ওই দুই গ্রামে ভাঙন রোধে বর্তমানে কোনো কর্মসূচি নেই।