সিরাজগঞ্জের বিজয় হত্যা: অভিযোগপত্রে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী

সিরাজগঞ্জের আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার প্রায় সাড়ে নয় মাস পর সংগঠনটির নেতাকর্মীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযেগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2021, 04:18 PM
Updated : 27 May 2021, 04:18 PM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক গত ১৩ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বৃহস্পতিবার আদালত পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “করোনার কারণে নিয়মিত কোর্ট চালু না থাকায় দাখিল করা চার্জশিটের [অভিযোগপত্র] বিষয়ে এখনও কোনো শুনানি হয়নি, তবে অপেক্ষমান রয়েছে।”

এনামুল হক বিজয় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারি হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ২৬ জুন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় তাকে কুপিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। নয় দিন পর ৫ জুলাই হাসপাতালে তিনি মারা যান।

অভিযোগপত্রের আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত দুই সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহম্মেদ জিহাদ ও আল আমিন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বিজয়, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান লিয়ন, কামারখন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি পারভেজ রেজা পাভেল ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মামুন সেখ ও কামারখন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আলামিন বাবু।

এছাড়াও রয়েছেন কামারখন্দ সদরের মাদানী সেলিমের ছেলে রাশেদ, একই উপজেলার বাড়াকান্দি গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুবায়ের, সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াগোবিন্দ ভাঙ্গাবাড়ির শহিদ সেখের ছেলে জাহিদুল ইসলাম, গয়লা বৌবাজার এলাকার শাহ আলমের ছেলে সাব্বির হোসেন, ইসলামপুরের আনিছুর রহমানের ছেলে সোহাগ ও দিয়ারধানগড়া মহল্লার একজন (১৮)।      

অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় তিন আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান পরিদর্শক আবুল কালাম।  

বিজয়ের উপর হামলার পর তার বড়ো ভাই রুবেল সেখ বাদী হয়ে ২৭ জুন ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে সদর থানার এসআই আনিছুর রহমান মামলার তদন্ত শুরু করেন।

বিজয় মারা যাওয়ার পর মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই বদরুদ্দোজা জিমেল।

এই অবস্থায় নিহতের বাবা আদালতে প্রথম মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ জনসহ মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত চলাকালে বদলিজনিত কারণে এসআই জিমেল অন্যত্র চলে গেলে ডিবি পুলিশের এসআই নাজমুল হক তদন্তের দায়িত্ব পান।

উভয় মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, অভিযোগপত্রে থানায় দায়ের হওয়া বিজয়ের ভাইয়ের মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ জন, বাবার দায়ের করা আদালতের মামলায় যুক্ত হওয়া ছয় জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত আরও দুই জন মিলে মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

এই আসামিদের মধ্যে একজনের বয়স কম [১৮] হওয়ায় তার বিচারকাজ শিশু আদালতে করার আবেদন করা হয়েছে।

মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে সিরাজগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা এমদাদ হোসেন এমদাদের নাম।

এই মামলায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বিজয়, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন, সয়াগোবিন্দ ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার জাহিদুল ইসলাম এবং দিয়ারধানগড়ার শিশু সাগর হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে মুক্ত আছেন। জেলহাজতে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব উদ্দিন জিহাদ।

অন্য আসামিদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি।