হাফিজুরের মৃত্যু: কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না পরিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2021, 05:54 PM
Updated : 24 May 2021, 05:54 PM

হাফিজুর ‘নিজের গলায় দা চালিয়ে নিজের প্রাণ নিয়েছেন’ বলে পুলিশ জানালেও তার ভাই হাবিবুর রহমান বুঝতে পারছেন না, কেন এমন হতে পারে।

ঈদের পরদিন জরুরি কাজের কথা বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের ইমাম মুজিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর। এরপর তার আর কোনো খোঁজ না পেয়ে কসবা থানায় একটি জিডি করা হয়।

আট দিন পর রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হাফিজুরের লাশ শনাক্ত করেন তার বড় ভাই হাবিবুর।

হাফিজুরের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সোমবার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র হাফিজুর রহমান ছিলেন একজন মুকাভিনয় শিল্পী। টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

বড় ভাই হাবিবুর বলেন, “ঢাকায় যাওয়ার আগে মাকে বলে এসেছিল, ‘জরুরি কাজে ঢাকা যাচ্ছি, দুদিন পর ফিরব’। সেদিনই ঢাকা পৌঁছে মাকে ফোন করে ফেরার কথা বলেছিল। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ।”

ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে পরে কসবা থানায় জিডি করেন হাবিবুর। শাহবাগ থানাকেও বিষয়টি জানানো হয়। হাফিজুরের ছবির সঙ্গে মর্গে একটি লাশের সদৃশ্য পাওয়ায় শাহবাগ থানার ওসি খবর দেন হাবিবুরকে। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাফিজুরের মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, "গত ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে একজন লোক ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কাটতে থাকে, আর বলতে থাকে 'আমাকে মাফ করে দাও', 'আমাকে মাফ করে দাও'।

“তার পরনে ছিল একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর খালি গা। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি করতে ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ লোকজনের সহায়তার ধরে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রিকশা থেকেও সে লাফ দেয়।”

মর্মান্তিক ওই ঘটনা বর্ণনা করে ওসি বলেন, “এরপর তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ দেখে ওটিতেও নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাত সোয়া ১০ দিকে তিনি মারা যান।”

হাফিজুর রহমান

তখনও ওই যুবকের পরিচয় পুলিশ জানত না। তার কাছে মোবাইল বা ব্যাগ কিছু ছিল না। আঙুলের ছাপ নেওয়া হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে মিলিয়ে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করে। পরে কসবা থানার জিডির ভিত্তিতে হাবিবুরকে ঢাকায় আনা হলে তিনি লাশ শনাক্ত করেন।  

হাফিজুরের মৃত্যুর যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তার ভাই হাবিবুর সে বিষয়ে ‘নিশ্চিত নন’ বলে জানালেন। এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা সেটাও তারা বুঝতে পারছেন না।

হাবিবুর বলেন, ঘটনার সময় হাফিজুরের সঙ্গে থাকা তিন যুবকের নাম পুলিশ তাদের বলেছে। তবে ওই যুবকদের সন্দেহ করা যায় কি না, সে বিষয়েও তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না।

এদিকে হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে চার সদস্যের ওই কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।