মধুমতীর জলে বেড়েছে লবণ, জীবন ‘দুর্বিষহ’

গোপালগঞ্জে মধুমতী নদীতে গত পাঁচ বছরে লবণাক্ততা বেড়েছে দেড় গুণের বেশি; যাতে সুপেয় পানির অভাবে ‘জীবন দুর্বিষহ’ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2021, 05:13 AM
Updated : 24 May 2021, 05:58 AM

লবণাক্ততার কারণে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায়  ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য বিভাগ, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টটদের কাছে এসব তথ্য পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপকচন্দ্র তালুকদার বলেন, “এ বছর মধুমতীতে লবণাক্ততা ধরা পড়েছে ২১০০ পিপিএম, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

“২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ১২০০ পিপিএম। পাঁচ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২১০০ পিপিএম। যেখানে মানবদেহে সহনীয় লবণের মাত্রা ৬০০ পিপিএম।”

গ্রীষ্মকালে নদীতে মিঠাপানি কমে যাওয়ায় সমুদ্র থেকে লবণাক্ত পানি চলে আসে।

প্রকৌশলী দীপকচন্দ্র বলেন, গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিাপাড়া পৌরসভায় মধুমতীর পানি ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের’ মাধ্যমে বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা হয়। গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত দুই পৌরসভার অন্তত তিন লাখ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়ে।

সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিনি আরও প্ল্যান্ট স্থাপনের পরামর্শ দেন।

জেলার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, লবণাক্ততার কারণে গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লবণাক্ত পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয়, ক্ষুধামন্দা, উচ্চ রক্তচাপ, চর্মরোগসহ মানাবদেহে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়।

তিনি পুকুর ও গভীর নলকূপের পানি ফুঁটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তাছাড়া হুমকিতে পড়েছে নদীনির্ভর কৃষি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, লবণাক্ত পানি ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে। জমি লবণাক্ত হয়ে যেতে পারে।

কৃষকদের পুকুর বা গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু পুকুর আছে তার পানি কৃষিকাজের জন্য যথেষ্ট নয় বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া ও একই উপজেলার গোপালপুর গ্রামের তরুণ বিশ্বাসসহ এলাকাবাসী জানিয়েছেন পুকুরের পানির সংকটের কথা।

তারা বলেন, পুকুর থেকে পানি দিলেও যেটুকু দরকার সেটুকু দিতে তারা পারছেন না। পুকুরে যথেষ্ট পানি নেই। তাছাড়া এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

আর সুপেয় পানির সংকটে ‘জীবন দুর্বিষহ’ হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক রবিন চৌধুরী বলেন, “সুপেয় পানির সংকটে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই পানি খাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে কাটাচ্ছি।”

পরিস্থিতির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেছেন গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “লবণাক্ত পানি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। লবণ ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করে। তাছাড়া মিঠাপানির জীববৈচিত্র্যের জন্য লবণ গুরুতর হুমকি।

“লবণের আগ্রাসন চলতে থাকলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।”