সোমবার সকালে জামালপুর পৌরসভায় এসে অপ্রত্যাশিত এ চাকরি পাওয়ায় আবেগে আপ্লুত হয়ে যান ২৬ বছর বয়সী আকলিমা আক্তার।
জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আলতাফ হোসেনের পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আকলিমা। ছয় মাস বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তার দুটি পা অবস হয়ে যায়। হাঁটতে পারেন না, হামাগুঁড়ি আর হুইলচেয়ারে চলাচল করতে হয় তাকে।
চাকরির জন্য অনেকের কাছে ধন্না দিয়েছিলেন, কিন্তু চাকরি মেলেনি বলে জানান তিনি।
তার জীবন সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আকলিমা জানান, মায়ের কোলে চড়ে আকলিমার স্কুলে যাওয়া শুরু। এরপর হামাগুঁড়ি দিয়ে স্থানীয় এক ব্র্যাক স্কুল থেকে প্রাথমিকের পাঠ চোকান।
পঞ্চম শ্রেণি পাশের পর শুরু হয় তার নতুন যুদ্ধ। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সুযোগ মিলছিল না তার। এতে তার পড়ালেখার প্রতি আরও জেদ চাপে বলে জানান তিনি।
অবশেষে শহরের ইকবালপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা সাউদা বেগম তাকে ভর্তি নেন। একই সাথে আকলিমার আশ্রয় ও পড়ালেখার দায়িত্বও নিয়ে নেন ওই প্রধান শিক্ষিকা।
২০১০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ২০১২ সালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি এবং ২০১৬ সালে দর্শন বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ-অনার্স পাশ করেন এই তরুণী।
পরে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে সিজিপিএ ৩.০৯ নিয়ে মাস্টার্স পাশে করেছেন তিনি। চাকরি জন্য যোগ্য নিজেকে আরও যোগ্য করে তুলতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নেন বলে জানান তিনি।
পৌর মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু জানান, আকলিমা ভালো ফলাফলসহ মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, আকলিমাকে আট হাজার টাকার বেশি বেতনে মাস্টাররোলে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে সব নিয়ম মেনে তার চাকরি স্থায়ী করা হবে। তখন ভালো বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন।
প্রতিবন্ধী আকলিমার সাথে সবাই যেন ভালো আচরণ করে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন মেয়র।
মেয়র বলেন, জামালপুর পৌরসভায় বসবাসকারী শিক্ষিত সব প্রতিবন্ধীকে কাজে লাগানো হবে।