রোববার সকাল থেকেই মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট হয়ে হাজার হাজার মানুষ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে।
লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, “জরুরি পরিষেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু জরুরি যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষও ফেরিতে উঠে পড়ছে এবং গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
শিমুলিয়ায় ঢাকার দিক থেকে আসা যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে বলে জানালেন শফিকুল।
বাগেরহাট থেকে আসা কমল মণ্ডল নামের এক যাত্রী বললেন, নিজের জেলা থেকে তিনি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছেছেন। অন্যসময় এই ভাড়া থাকে ৩০০ টাকা।
আর বরিশাল শহর থেকে আসা ফাতেমা রহমান বলেন, “আমার বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত আসতেই ৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। না এসে উপায়ও নেই, অফিস খুলে গেছে।”
কাঁঠালবাড়িতে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ম্যানেজার ভজন কুমার সাহা জানালেন, এই নৌরুটে এখন চলাচল করছে ১৫টি ফেরি।
“আজ ভোর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ফেরিতে করেই তারা পার হচ্ছে। আমরা পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যরার ঘাটের পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন।”
ঈদযাত্রার সঙ্গে যেন ভাইরাস যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন।
ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে সে সময় বাড়িতে গেছে। ফেরিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
ঝুঁকি নিয়ে সেই ঈদযাত্রা ঠেকানো না গেলেও এখন মানুষের ফিরতি যাত্রা বিলম্বিত করা যায় কীভাবে, সেই পথ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
তিনি বলেছিলেন, “এই লকডাউনের মধ্যে আবার যদি লোকজন এভাবেই ফেরে তাহলে এটা অবশ্যই বিপজ্জনক হবে। এ কারণে এই ফেরাটা যদি একটু বিলম্বিত করা যায় ভালো হয়। এছাড়া যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে।”
সেই বিপদ এড়াতে সরকার ইতোমধ্যে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববারই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে।