খুলনায় খাল সংস্কারে সড়কে ধস

খুলনার ডুমুরিয়ায় একটি খাল সংস্কারের কারণে খালপাড়ের সড়কে ধস নেমেছে; এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।

শুভ্র শচীন খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2021, 12:03 PM
Updated : 11 May 2021, 12:03 PM

উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের লাইন বিলপাবলা খালপাড়ের এই সড়কে এক বছর আগে ইট বিছানো হয়েছিল।

খুলনা শহর সংলগ্ন হলেও অনগ্রসর ছোট্ট একটি গ্রাম লাইন বিলপাবলা। এখানে কয়েকশ মানুষের বসবাস। বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামের পাশ দিয়ে খুলনা-ফুলতলা বাইপাস সড়কটি নির্মিত হয়। গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিতে এক বছর আগে ইট বসানো শুরু হয়; কিন্তু কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি।

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত। নিয়মিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা গেছে, খুলনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ময়ূর নদের সঙ্গে লাইন বিলপাবলা খাল সংযুক্ত। বহু বছর খালটি খনন হয়নি। চলতি বছরের মার্চে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটির তিন হাজার ৫০ মিটার পুনঃখননের কাজ শুরু হয়।

মেসার্স এ এস কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও তার পক্ষে ঠিকাদার লাভলু রহমান এক মাস আগে রায়ের মহল স্লুইস গেট থেকে খনন কাজ শুরু করেন। চলতি মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে লাইন বিলপাবলা গ্রামে দেখা যায়, সড়কটির এক পাশে ফসলি জমি ও মানুষের বসতবাড়ি, অন্যপাশে খাল। এই খালের পানির ওপর নির্ভর করে এলাকায় মৎস্য ঘের গড়ে উঠেছে। খালের পাড়ে অনেকেই মাছের ঘেরের পাশাপাশি সবজির আবাদও করেছেন।

ইতোমধ্যে রায়েরমহল স্লুইসগেট থেকে লাইন বিলপাবলা রেলসেতু পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খনন করা হয়েছে খালটির। খালের দুই পাশের অসংখ্য গাছ খনন যন্ত্রের সাহায্যে উপড়ে ফেলায় সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ধসে পড়ছে। বেশ কিছু দোকান, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল ধরেছে। কয়েকটি স্থান ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ ভেঙে খালের মধ্যে চলে গেছে। সকল প্রকার যানবাহনের পাশাপাশি মানুষের চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

দুধ বিক্রেতা দীপক বিশ্বাস সাইকেল আর কলস কাঁধে এবং মাছ বিক্রেতা অসীম বিশ্বাস মাথায় ঝুড়ি নিয়ে সড়কের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি অংশ পার হচ্ছিলেন।  

দীপক বিশ্বাস বলেন, “আমাদের মতো অনেকে গ্রাম থেকে মাছ, দুধ, ডিম কিনে সাইকেলে করে সেগুলো শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। খালপাড় খাড়াখাড়িভাবে কাটায় বিভিন্ন জায়গায় মিলে কমপক্ষে এক কিলোমিটার ধসে গেছে। এখন আমাদের সময়ও নষ্ট হচ্ছে আবার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।”

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম ও আতা বলেন, তারা এলাকার জমিতে দুইবার ধান ছাড়াও সবজির আবাদ করেন। প্রতিদিন সবজি বিক্রি করতে শহরে যাওয়ার সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া খালে পানি প্রবাহ, খুলনা শহরের পানি নামার একটি পথ তৈরি, জলাবদ্ধতা দূর করা ও ফসলের ক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেন তারা।

সাইদুর রহমান বলেন, “সড়কটি খাড়া, কোনো ঢাল নেই। এজন্য খননের সময় ধসে যাচ্ছে। মাটি ওঠাতে গেলেই ভাঙছে। ভাঙা অংশ ঠিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।”

ঠিকাদার শিমুল বিশ্বাস বলেন, “ডিজাইনে ওই সড়কে কোনো স্লোপ নেই। যেভাবে ডিজাইন ছিল আমরা সেইভাবে খাল কেটেছি। খালের মাটি জোবা, আঠালো না। তাছাড়া খাল ৫ ফুট গভীর হওয়ায় সড়কটি দেবে গেছে। তবে যেখানে দেবে গেছে সেখানে আমরা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেব।”

লাইন বিলপাবলা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গুটুদিয়া ইউনিয়নের বিনয় সরদার ও শ্যামল শিকদার বলেন, খালপাড় খাড়াখাড়িভাবে কাটায় ও গাছ উপড়ে ফেলায় পাশের বিভিন্ন স্থাপনাসহ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার ধসে গেছে। তিনটি পয়েন্ট পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সামনে বর্ষাকাল। এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

ডুমুরিয়ার ইউএনও আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, খাল খননের জন্য সড়কটি ধসে গেছে। সড়ক ভেঙেছে যারা মেরামতের দায়িত্বও তাদের। সড়কের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশে মেরামত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দও করা হয়েছে।”

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের ধান, মাছ, সবজিসহ কৃষি পণ্য উৎপাদনে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারিভাবে খাল খনন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, গুটুদিয়ায় লাইন বিলপাবলা খাল খনন সম্পর্কে ডুমুরিয়া ইউএনওকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

ডুমুরিয়া-ফুলতলার সাংসদ সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, “আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। অবিলম্বে সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।”