বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন ত্যাগ করে নগরীর চৌদ্দপায় এলাকায় বিশ্ববিদালয় হাউজিং সোসাইটিতে নিজের বাসায় উঠেছেন।
যাওয়ার আগে তিনি ১৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন।
২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। বৃহস্পতিবার তার শেষ কার্যদিবস ছিল।
উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সব নিয়োগ স্থগিত করে দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই অ্যাডহকে ১৪০ জনকে নিয়োগ দিয়ে বিদায় নিলেন উপাচার্য।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান বলেন, "শেষ দিনে অ্যাডহকে ১৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলন করে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের 'দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ' ব্যানারে একদল শিক্ষক।
তাদের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, "শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়োগ দিয়ে গেলেন উপাচার্য। উনি শেষ দিন পর্যন্ত অনিয়ম করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেন।"
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্যারিস রোড, প্রশাসন ভবন, শহীদুল্লা কলা ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চাকরি প্রত্যাশী সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকে নতুন নিয়োগের বিষয়ে ক্যাম্পাসে আলোচনা চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে একদল যুবক সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সেকশক অফিসার মাসুদের ওপরও হামলা চালান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা হয়।
এক পর্যায়ে রাবি ছাত্রলীগ, মহানগর ছাত্রলীগ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “মহানগর ছাত্রলীগের কিছু সদস্য হঠাৎ এসে ক্যাম্পাসে ঝামেলা করে। তারা এখন আর নেই। তাদের প্রতিহত করা হয়েছে।”
এই বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি সিয়াম আহমেদ বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছেন। এটা অন্যায়। এর প্রতিবাদ করতে তারা এসেছিলেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে মারামারি বেধে যায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, "উপচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগের আগে মহানগর ছাত্রলীগ আর ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”
পুলিশি পাহারায় উপাচার্য ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।
গত বছরের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির বিষয়ে ৩০০ পৃষ্ঠার অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) দিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ।
পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে।
তদন্ত শেষে গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি। পরে গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ স্থগিত করে দেয়।