সোমবার চট্টগ্রাম থেকে শরীফুল ইসলামকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গ্রেপ্তার হন মো. বেল্লাল (৩২), তার ভাই আবুল কাশেম ও আবু মাঝি।
গত ৭ এপ্রিল ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের আসলামপুর গ্রামে খুন হন অমিত সরকার তপন (৫৫) ও তার ভাই দুলাল সরকার (৫২)। এরা চরফ্যাশন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার বাড়ির প্রয়াত উপেন্দ্র সরকারের ছেলে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে ‘ভাড়াটে খুনি’ শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছি এবং মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আমরা ভোলায় নিয়ে আসি।”
শরীফুল ইসলাম চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার করিম পাড়ার শাহে আলমের ছেলে। তিনি পেশায় ট্রাক চালক।
শরীফুল এই হত্যার দায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে এসপি কায়সার জানিয়েছেন।
এসপি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন- দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে তিনি চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের বিল্লালদের কথামতো দুই সহোদর অমিত সরকার তপন ও দুলাল সরকারকে হত্যা করেছেন।
শরীফুলের বরাত দিয়ে এসপি হত্যার কারণ বর্ণনা দেন
প্রায় ৩ বছর আগে অমিত সরকার তপন ও তার ভাই দুলাল সরকার তাদের বসত ভিটাসহ জমি বিক্রির কথা বলেন আবু মাঝিকে। পরে আবু মাঝি আসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা তার মেয়েজামাই মো. বেল্লালের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর যোগ হন বেল্লালের ভাই আবুল কাসেম।
বেল্লালদের কাছে ৪৬ শতাংশ জমি বিক্রির দরদাম ঠিক হয় ২০ লাখ টাকা। এরমধ্যে তারা ৩ লাখ টাকা বায়না করে জমির দলিলের আগে সব টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেন।
কিন্তু এরপর তারা টাকা না দিয়ে জমির দলিল করে দিতে অমিত ও দুলালকে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আরও ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দলিল দিতে বলেন। আশ্বাস দেন বাকি টাকা শিগগিরই দিয়ে দেবেন।
এরপর অমিত ও দুলাল জমি দলিল করে দেন। কিন্তু এরপরও বেল্লাল বাকি টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন।
এসপি সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, তপন ও দুলাল টাকা না পেয়ে তাদের এক ভাইকে দিয়ে ওই জমির অগ্র ক্রয়ের মামলা করান। এরপর বেল্লাল ও তার সহযোগীরা এই দুই ভাইকে হত্যার করার পরিকল্পনা করেন এবং শরীফুল ইসলামকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ভাড়া করেন।
তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল রাতে ওই দুই ভাইকে টাকা নেওয়ার জন্য আসলামপুর গ্রামের আসতে বলেন বেল্লাল। সেখানে গেলে সুন্দরী ব্রিজ সংলগ্ন ভূঁইয়ার বাগানে নিয়ে তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শরীফুল। পরে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে সুন্দরী খালে ফেলে দেন। এরপর গভীর রাতে তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
“ঘটনার পরদিন [৮ এপ্রিল] মস্তকবিহীন পোড়া অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আন্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তাদের দাফন করে।”
এদিকে, পুলিশ মাথা খুঁজতে শুরু করলে আসামিরা খাল থেকে মাথা দুটি উঠিয়ে ওই এলাকার ফরাজী বাড়ির মহিবুল্লাহ বাড়ির শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে।
ঘটনার ১৪ দিন পর গত ২২ এপ্রিল বিকালে দুই মস্তক ওই সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এর সূত্র ধরে বেল্লাল, আবু মাঝি ও আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এসপি জানান।
“তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল হত্যার সময় ব্যবহৃত অস্ত্র সুন্দরী খাল থেকে উদ্ধার করা হয় এবং গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডের ভাড়াটে খুনি শরীফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়,” বলেন এসপি।