স্পিডবোট দুর্ঘটনা: মাকে শেষবার দেখতে যাচ্ছিলেন, পথে হারালেন স্বামী-সন্তান

মায়ের মৃতদেহ দেখতে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে স্বামী আর সন্তান হারিয়েছেন ফরিদপুরের আদুরি বেগম। 

মাদারীপুর প্রতিনিধি‌রিপনচন্দ্র ম‌ল্লিক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 10:58 AM
Updated : 3 May 2021, 12:18 PM

সোমবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আদুরির স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছরের শিশু ইয়ামিন।

এই দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ছয় জন।  

স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে একই স্পিডবোটে আদুরিও ছিলেন, যিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাবাজার ঘাটের কাছে দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা অন্যান্য লাশের মধ্যে স্বামী আর সন্তানকে খুঁজে পান।  

আদুরির আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এখানকার পরিবেশ।

আদুরি বেগম জানান, মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন তিনি স্বামী ও সন্তানসহ।

“আমার সব শেষ হয়ে গেছে; আমার আর কিছু রইল না,“ বলে কান্নায় ভে‌ঙে প‌ড়েন তিনি।

আদুরি বেগমসহ বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, তাদের যাত্রার শুরু থেকেই বেপরোয়া গতিতে স্পিডবোটটি চালানো হচ্ছিল।

‘বেপরোয়া’ গতির করণে তীরে নোঙর করা বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, আদুরির মতো আরও অনেকেই স্বজনদের খোঁজ করছে। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেখানে মৃতদেহগুলো রাখা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন নিহতদের সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্র দেখে স্বজনদের কাছে খবর দিচ্ছিলেন।

লকডাউনে সড়ক, নৌ এবং বিমান চলাচল নিষেধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নৌযান চলছিল। এছাড়া তাতে ‘অতিরিক্ত’ যাত্রী নেওয়া হয়েছিল বলেও যাত্রীদের অভিযোগ।

নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে বলে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক র‌হিমা খাত‌ুন জানান।

‌শিবচর থানার ওসি মিরাজ হো‌সেন ব‌লেন, সোমবার সকালে ৩২ জন যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার আসার পথে স্পিডবোট ও বাল্কহেডের সংঘর্ষে নিহত হন ২৬ জন। আহত ছয় জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আট জনের লাশ বুঝে নিয়েছেন স্বজনরা

স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে আট জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৩ মে) দুপুর ২ টা পর্যন্ত নিহত ৮ জনের স্বজন তাদের লাশ বুঝে নিয়েছেন।

শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমির হোসেন বলেন, স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আট জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ঘাট সংলগ্ন দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনে রাখা মরদেহগুলোর মধ্যে স্বজনরা শনাক্ত করার পর সাত জনের এবং হাসপাতাল থেকে এক জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যাদের মরদেহ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন আরজু সরদার (৫০), ইয়ামিন (২), তাহের মীর, কাওসার, রুহুল আমিন, জিয়াউর রহমান ও সাগর শেখ।

আমির হোসেন আরও জানান, এছাড়া আহত একজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল যিনি সেখানে মারা যান। তার মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন