বংশপরম্পরায় ধান কাটেন তারা

বাবার কাছে ধান কাটা শেখেন আর ছেলেকে শিখিয়ে দেন। এভাবেই বংশপরম্পরায় চলে আসছে সুনামগঞ্জের কৃষিশ্রমিকদের জীবন।

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2021, 07:26 AM
Updated : 1 May 2021, 07:36 AM

জেলার তাহিরপুর উপজেলার লামাশ্রম গ্রামের মধু মিয়া তাদেরই একজন। উপজেলার শনির হাওরে ধান কাটতে এসেছেন তিনি।

মধু মিয়া বলেন, তার বয়স ৫০ বছর। ৩০ বছর ধরে তিনি শনির হাওরে ধান কাটতে আসছেন। শনির হাওর তার বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। যার জমিতে ধান কাটে তার বাড়িতে অথবা হাওর পারের গ্রামে কোনো একটা কাছারি ঘরে থাকেন তারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রথমে এসেছিলাম বাবার হাত ধরে। এখন আমার ছেলে আজিজুল হকও কয়েক বছর ধরে আমার হাত ধরে ধান কাটতে আসছে।”

সোমবার শনির হাওরে গিয়ে এই বাবা-ছেলেকে ধান কাটতে দেখা গেছে। তীব্র রোদ মাথায় অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ধান কাটছেন তারা।

এই দলে আরও ছিলেন উপজেলার বিন্নাকুলি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৫৫)।

তিনি বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে ধান কাটি। আমার সঙ্গে ছেলে ফসিউল আলম ১০ বছর ধরে ধান কাটছে।”

তারা ভাগে ধান কাটেন। ধান কাটার দায়িত্ব তাদের। মাড়াই করার দায়িত্ব জমির মালিকের। মাড়াই শেষে সাত ভাগে এক ভাগ ধান পান কাটা শ্রমিকরা।

রাজ্জাক বলেন, “বাবা-ছেলে মিলে কয়েক মাসের খোরাকি সংগ্রহ করতে পারি বোরো মৌসুমে। পাহাড়ি ঢল, শিলা বা বন্যায় হাওর না ডুবলে ছয় মাসের খোরাক তোলা যায়।”

একই গ্রামের নূর আলম (৪৮) ছেলে নজরুল ইসলামকে নিয়ে ধান কাটতে এসেছেন। নজরুল এবারই প্রথম বলে জানান নূর আলম।

মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আয়ূব আলী (৫৫) বলেন, এ বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তার জমির ধান কাটতে ১৮ জন শ্রমিক এসেছেন।

“তারা আমার দেরিঘরো আশ্রয় নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ধান কাটা শেষ। এখন তারা অন্য কৃষকের ধান কাটছে। কয়েকজন কৃষক আছে যারা ৩০-৪০ বছর ধরে ধান কাটছে। এখন তাদের সঙ্গে তাদের ছেলেরাও ধান কাটতে আসে। তারা না থাকলে কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে সমস্যা হয়। কারণ এখন আর অন্য জেলা থেকে বেশি শ্রমিক আসে না।”

এক সময় পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরে বিভিন্ন জেলার অনেক শ্রমিক হাওরে ধান কাটতে আসতেন। এখন তাদের সংখ্যা কমে গেছে বলে তিনি জানান।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, এ বছর বাইরের জেলা থেকে মাত্র হাজার ছয়ে শ্রমিক এসেছেন। স্থানীয় শ্রমিক মিলে এবার এ জেলায় ধান কাটছেন প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক।

“অনেক শ্রমিককে বংশপরম্পরায় ধান কাটতে দেখেছি। ফলন ভাল হলে তারা অন্তত ছয় মাসের খোরাক সংগ্রহ করতে পারেন; যারা ধানের ভাগ নেন।”

অনেক শ্রমিক ভাগ না নিয়ে দৈনিক মজুরি হিসেবে টাকা নেন। এ বছর দৈনিক মজুরি কমবেশি পাঁচ শত টাকা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জের হাওরে এ বছর ইতোমধ্যেই ৯০ শতাংশের বেশি জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল হাসান।