খুলনায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে জোয়ারের পানি

পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার কয়রায় কয়েকটি জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

শুভ্র শচীনখুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2021, 04:23 PM
Updated : 29 April 2021, 04:23 PM

গত তিন দিনে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে লোনা পানি প্রবেশ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খবরটি শুনে পরিস্থিতি মনিটরিং করার কথা বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়নি। এই পানি বৃদ্ধতে কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।

যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, মৎস্য ঘের, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে পানিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে চুইয়ে ও ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে নদীর পানি এলাকায় প্রবেশ করে।

“স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন জায়গায় মাটি দিয়ে পানি ঢোকার পথ বন্ধ করছে। কিন্তু আরও পানি বৃদ্ধি পেলে এই বাঁধ টিকিয়ে রাখা যাবে না।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মুকুল সরদার বলেন, “গত বছর আম্পানে এই বাঁধের কয়েকটি স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছিল। আইলার সময়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কখনও কখনও দায়সারা কাজ হয়েছে। এখন প্রবল জোয়ারে আবার বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”

আম্পানে বাঁধ ভেঙে যে ক্ষতি হয়েছিল এখনও সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মশিউল আবেদীন বলেন, “পানি ঢোকার সংবাদ শুনে প্রথম থেকেই আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। পূর্ণিমার প্রভাবে জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে পানি যাচ্ছে। তবে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।”

গত বছর ২০ মে আম্পানের আঘাতে জোয়ারের পানি বেড়ে দশালিয়ার বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এরপর এখনও সেখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।

স্থানীয় সংবাদকর্র্মী নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, দুর্যোগ কবলিত সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের মানুষ ভাঙা-গড়ার মধ্যেই দিনাতিপাত করছে। একটির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন নামে ফের আঘাত হানছে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘুর্ণিঝড়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠী। কেউ কেউ এলাকা ছাড়ছে।

এ সময় নিশীথ ২০০৮ সালের মে মাসের নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে’র আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে’র মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাইয়ের কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে’র রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে’র মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে’র ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বরের বুলবুল, সর্বশেষ ২০ মে’র আম্পানের কথা স্মরণ করেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, উপকূলে জোয়ারের তীব্রতা তো আগে থেকেই ছিল। অতি জোয়ার ও নোনা ঠেকানের জন্যই তো ইপি-ওয়াপদা (ইস্ট পাকিস্তান-ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) সিইপির (কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট প্রজেক্ট) আওতায় পোল্ডার ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

“এই ব্যবস্থায় নদীর দুই তীরে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়; আর প্লাবনভূমির পানি নিষ্কাশনের জন্য স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের কারণে জোয়ারের চাপ বোঝা যেত না। এখন বাঁধ ভাঙছে, তাই জোয়ারের তোড় বোঝা যাচ্ছে।”

সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। ওই এলাকায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।