নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেনাপোল বন্দরে যাত্রী পারাপার, রোগীরা বিপাকে

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী আসা-যাওয়ায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে দুদেশের আটকে পড়া যাত্রীরা দেশে ফিরছেন।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2021, 06:00 PM
Updated : 27 April 2021, 06:00 PM

মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আটকে পড়া ৪৪ জন বাংলাদেশি বেনাপোল স্থলপথে দেশে ফিরেছেন। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত গেছেন ১৪ ভারতীয় বলে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানিয়েছেন।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনারের ছাড়পত্র থাকায় আটকে পড়া যাত্রীদের কয়েকজন ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট যাত্রী নতুন করে ভারতে যায়নি কিম্বা ভারত থেকেও কেউ বাংলাদেশে আসেনি।

"বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দেরও দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে একটি ওয়েবসাইটে নির্দেশনা দেয় ভারতীয় দূতাবাস। এতে বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ৫৮ জন। এদিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভারতে ফিরেছে ১৪ জন ভারতীয়।"

ভারতের করোনাভাইরাসের নতুন ধরন রোধে বাংলাদেশ সরকার দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ১৪ দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে আটকে পড়া যাত্রীদের দূতাবাস থেকে বিশেষ অনুমতি মিলছে।

এদিকে ভারতফেরত বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিদের্শনা নিয়ে অসন্তোষ দেখিয়েছে যাত্রীরা।

ভারত ফেরত এসব যাত্রীরা বলছেন, তাদের বেশির ভাগই চিকিৎসা নিতে ভারত গিয়েছিলেন। ভারতে আটকা পড়লে কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনার অফিসে আবেদন করে ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

তাদের অভিযোগ, বেনাপোলের আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন তাদের জন্য অনিরাপদ এবং ব্যয়বহুল। প্রতিদিন রুম ভাড়া ৫শ থেকে হাজার টাকা গুণতে হবে। খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই বলছেন তারা।

ভারত ফেরত বগুড়ার আশরাফুল কবীর জানান, তার বড় ভাইয়ের কিডনি চিকিৎসার জন্য এক মাসেরও বেশি সময় কলকাতায় ছিলেন। সোমবার পেট্রাপোলে এসে শোনেন হাই কমিশনারের এনওসি বাদে বাংলাদেশে ঢোকা যাবে না।

“আজ (মঙ্গলবার) সেটাও সংগ্রহ করেছি। আমাদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদও এনেছি। এরপরও আমাদের আটকে রেখেছে নিজ খরচে হোটেলে কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে।

“আমার ভায়ের সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার ডায়ালাসিস করতে হয়, তাকে তো হোটেলে রাখা যায় না। আমরা বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে চাই।”

ডাস বাংলা ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান (৪৫) বলেন, আমার ছেলে নাজমুস সাদাতের লিভার নষ্ট হয়ে গেছে। হায়দারাবাদে তার চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরেছি।

“কলকাতা হাইকমিশনের অনাপত্তিপত্র নিয়ে এসেছি। ও দেশের ইমিগ্রেশন আমাদের ছাড় দিলেও আমাদের ইমিগ্রেশন আটকে রেখেছে। হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থাকাটা যেমন অনিরাপদ তেমনি ব্যয়বহুল।”

বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান, সরকার ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭৯ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী দেশে ফিরতে কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেছেন।

“গত দুই দিনে ফিরেছেন ৪৪ জন।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকরা ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করে দেশে ফেরার অনুমতি পেয়েছেন ৫৮ জন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারতে ফিরেছেন তাদের ১৪ জন বলেন তিনি।

তিনি জানান, ভারত ফেরত বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

“একজন ভারতফেরত করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিকে যশোর সদর হাসপাতালে রেড জোনে নেওয়া হয়েছে।”