লকডাউনে শ্রমিক সংকট: ফসল তুলতে বিপাকে নওগাঁর চাষিরা

লকডাউনের মধ্যে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা ও মাড়াইসহ ঘরে তুলতে বিপাকে পড়েছেন নওগাঁর কৃষকরা।

সাদেকুল ইসলাম নওগাঁ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2021, 07:07 AM
Updated : 26 April 2021, 07:08 AM

ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সময়মতো কেটে ঘরে তুলতে না পারলে ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির শঙ্কায় উকণ্ঠিত তারা।

চাহিদার তুলনায় শ্রমিক কম হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরিও বেশি পড়ছে বলে চাষিদের ভাষ্য। 

নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাইরের কৃষি শ্রমিক আনার উদ্দ্যোগ নেওয়া হলেও আশানুরূপ শ্রমিক আসেনি বলেও চাষিরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় চাষিরা জানান, জেলায় বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ে স্থানীয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ছাড়াও জেলার বাইরের আরও এক লাখ পাঁচ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এর বিপরীতে গত কয়েকদিনে বাইরে থেকে কৃষি শ্রমিক এসেছে মাত্র পাঁচ হাজার, যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, জেলায় বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ে মোট সাড়ে চার লাখ কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন। অভ্যন্তরীণ শ্রমিক বাদ দিয়ে জেলায় বাইরের কৃষি শ্রমিকের প্রযোজন এক লাখ পাঁচ হাজার।

“কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের কারণে বাস, ট্রেন ও অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে জেলার বাইরের গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা ও এলাকার শ্রমিক আসতে পারছে না।”

তবে চাষিদের যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত কয়েকদিনে মাত্র পাঁচ হাজার শ্রমিক জেলায় ধান কাটতে এসেছে বলে তিনি জানান।

শামছুল ওয়াদুদ আরও জানান, জেলায় এবছর এক লাখ ৮০ হাজার ৬২৪ হেক্টর জমিতে বোরো রোপনের লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়। কিন্তু রোপা আমনে ভালো দাম পওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে বোরো রোপন করা হয়েছে। এবার ধানের ফলন খুব ভালো এবং প্রতি বিঘায় ধান পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ মন হারে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং সময়মত ধান ঘরে তুলতে পারলে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

প্রতিমন নতুন ধান বাজারে নয়শ হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাইরে থেকে আসা শ্রমিকরা বলছেন, এবার নওগাঁয় বাস কিংবা মাইক্রোবাসযোগে নওগাঁয় আসতে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এই কারণে বোরো চাষিদেরও গত বছরের চেয়ে প্রতিবিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থাৎ সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগছে।

দিনাজপুরের বিরল এলাকা থেকে আসা কৃষি শ্রমিক আজহারুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবারে নওগাঁয় আসতে যানবাহনের ভাড়া দ্বিগুণ লেগেছে। এই কারণে স্বভাবিকভাবে মজুরি ৫শ থেকে এক হাজার টাকা বাড়বে। বর্তমানে আমরা প্রতি বিঘা জমির ধান কাটছি চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা দরে।”

নওগাঁ সদরের দিঘলীর বিল এলাকার বোরো চাষি বাবলু প্রমানিক জানান, এখন পর্যন্ত বাইরের শ্রমিক না আসায় প্রতি বিঘায় পাঁচশ টাকা বেশি মজুরিতে চার হাজার টাকায় কাটতে হচ্ছে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে।

বর্তমানে জেলার হাটবাজারে প্রতিমন ভিজাধান নয়শ থেকে এক হাজার ৫০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ধানের দাম এর নিচে এলে বোরো চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মহাদেবপুরের পাহাড়পুর এলাকার বোরো চাষি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় বোরোর ফলন ৪/৫ মন বেশি হচ্ছে। কিন্ত প্রয়োজনীয় শ্রমিক না থাকায় পাকা ধান কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। সময়মত জেলায় বাইরের  শ্রমিক না এলে বোরো কাটা মাড়াইয়ে চাষিদের বিড়ম্বনাসহ ঝড়বৃষ্টিতে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।

আত্রাইয়ের মালিপুকুর এলাকার বোরোচাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এবছর ১৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। কিন্ত ধান পেকে যাওয়ার পরও জেলার বাইরের শ্রমিক না আসায় ও ঝড়-বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতির আশংকায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে প্রতিবিঘা চার হাজার টাকায় পাকা-আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলেছি।”

নওগাঁর পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ ব্যবস্থায় যোগাযোগ করে নিয়ে আসা বাইরের শ্রমিকদের আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। পাশাপাশি জেলার শ্রমিকদের এক থানা থেকে অন্য থানায় পুলিশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিয়েছে।”