শ্রীমঙ্গলে কৃষকদের ধান কেটে দিলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ইউএনওর আহ্বানে কৃষকদের বোরো ধান কেটে দিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2021, 03:04 PM
Updated : 22 April 2021, 03:04 PM

‘ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার শঙ্কায়’ ইউএনও এই আহ্বান জানানোর পর বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক কালাপুর ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের হাইল হাওরে ধান কাটায় অংশ নেন।  

বেলা ১১টার দিকে সরজমিনে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলীর প্রায় অর্ধশত শিক্ষক মাথায় গামছা বেঁধে কাস্তে হাতে নিয়ে ধান কাটতে নেমে পড়েছেন।

ইউএনওর নেতৃত্বে অর্ধশত শিক্ষক ছাড়াও ধান কাটায় অংশ নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেছার উদ্দীন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ কুমার বর্ধন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর প্রমুখ।

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহর তরফদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের এই ধান কাটার নেতৃত্ব দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের ফেইসবুক পেইজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম ঘরে বসে থাকা মানুষকে স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের পাকা ধান কেটে দেওয়ার আহবান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার প্রখর রোদ উপেক্ষা করে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছে।

“শিক্ষকরা তা করছেন বিপুল উৎসাহ নিয়ে এবং ধান কাটার গতিও সাধারণ কৃষকের ন্যায়। দুই ঘণ্টায় তারা কয়েক একর ধান কেটে দেন।”

শ্রীমঙ্গল ইউএনও স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন এবং ‘টানা দুই ঘণ্টা’ ধান কেটেছেন বলে তিনি জানান।

শ্রীমঙ্গল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ দেব জীবন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বর্তমানে তাদের স্কুল বন্ধ। শহর ও শহরতলীতে বসবাসকারী যেসকল শিক্ষকের নিজেদের কৃষিক্ষেত নেই তারা স্বউদ্যোগে সকালে ধান কাটতে আসেন। তারা প্রায় ৫০ জন শিক্ষক হাজীপুর এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন।

“কৃষদের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেদের খুব ভালো লাগছে। আগামীতেও আমরা এভাবে ধান কেটে দেব,” বলেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এই মৌসুমে উপজেলার ৯ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলের নিচু জায়গায় ৩ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি রয়েছে, যে জমিগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে হাওরের প্রায় ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, চলতি সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত ও  হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে প্রায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে। হঠাৎ যদি ভারি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে এই পাকা ধানগুলো পানির নিচে পড়ে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

“একজন কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া মানে দেশের উৎপাদিত ধান নষ্ট হয়ে যাওয়া। তাই দেশের এ কৃষি সম্পদ রক্ষায় আমি কৃষি অফিসের সাথে আলোচনা করে ফেইসবুকে স্বেচ্ছায়শ্রমে ধান কেটে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। এতে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার এগিয়ে আসে।”

তিনি শুক্রবার শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নে ধান কেটে দেবেন বলেও জানান।