গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হলেও সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পভুক্ত মহাসড়কের দুই দিকের কাজ শেষ হওয়ায় বিপুল সংখ্যক যানবাহন প্রতিনিয়ত শহরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে। এতে শহরাসী নিত্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সড়ক বিভাগ ও জেলা প্রশাসক জানায়, ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে সয়দাবাদ মুলিবাড়ির মোড় থেকে সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে নলকা পর্যন্ত দুই ও চারলেন মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
সম্প্রতি সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের শহরের অংশের দুই পাশের দুই লেনের কাজ শেষ হলেও মালশাপাড়া কাটাওয়াবদা মোড় থেকে শহরের অভ্যন্তরের সার্কিট হাউস পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার চারলেনের কাজ বন্ধ রয়েছে।
দেড় কিলোমিটার এলাকায় একটি লেন নির্মাণ করা হয়েছে। এই লেন দিয়ে পাশের রুটের যানবাহনগুলো চলাচল করছে। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছে সব ধরনের যানবাহন।
সয়াধানগড়া থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মোড়, কোর্ট চত্বরের প্রধান ফটক, বাজার স্টেশন পর্যন্ত যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।
সড়কে ভোগান্তি সম্পর্কে বাস চালক জনি, সুপারভাইজার আরিফ, অটোরিকশা চালক মিঠুন ও বাস শ্রমিক শাহানুর বলেন, মুলিবাড়ি থেকে গোশালা রেলগেট পর্যন্ত সুন্দর সড়ক নির্মাণ হলেও শহরের মাঝখানে দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাজার স্টেশন, চামড়াপট্টি ও বাস টার্মিনালে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে চাপ বেড়ে গেলে যানবাহনগুলো এই সড়কে প্রবেশ করে। তখন দুর্ভোগ আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শামসুজ্জামান আলো বলেন, সিরাজগঞ্জের উন্নয়নের গতিধারা প্রবাহিত করতে এই ফোরলেন দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। না হলে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা সিরাজগঞ্জ।
‘স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির’ সদস্য নব কুমার কর্মকার বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ফোরলেন কাজ শেষ হচ্ছে না। ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ মহুকুমাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা ঘোষণা হলেও শহরটিতে প্রবেশের জন্য আঞ্চলিক ছাড়া কোনো মহাসড়ক ছিল না। তাই চারলেন মহাসড়ক নিয়ে জেলাবাসীর আগ্রহ অনেক বেশি। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সিরাজগঞ্জের নতুন স্বপ্ন দেখা মানুষের প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ার শঙ্কাও বেড়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তূর্ণা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আজাদুর রহমান বলেন, “ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বিগত দেড় বছর ধরে সার্কিট হাউস থেকে কাটা ওয়াপদা পর্যন্ত কাজ করতে পারছি না। এছাড়াও বৈদ্যুতিক পোল অপসারণ না করায় দেড় মিটার করে বাদ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতেও সমস্যা হচ্ছে।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. গোলাম রাব্বী বলেন, “২০১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইনে তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। সওজ অফিস ৬৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এখনও ৭৮ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। পুরো টাকা না দেওয়ায় আমরা জমি অধিগ্রহণ করতে পারছি না।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, এই প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭৩ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু সরকারি নতুন প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী তিন গুণ হিসাবে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ১৪৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছে।
“আমরা এটি রিভাইস করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটা অনুমোদন হলে পুরো টাকা দিতে পারব এবং পরবর্তী কাজ করা সম্ভব হবে।”