স্বল্প আয়ের মানুষ এখান থেকে কাঠর তৈরি চেয়ার, টিবিল, চৌকি, খাট, টুল, বেঞ্চি ইত্যাদি কিনে নেন। গত বছর সাধারণ ছুটির পর থেকে এই বাজারে বিক্রেতারা ক্রেতার আশায় বসে থাকেন, কিন্তু ক্রেতা মিলছে না ঠিকমতো।
আর্থিক সংকটে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী মহাজনের টাকা ও এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা থেকে শহীদ খোকন পার্কের পশ্চিম গেট পর্যন্ত টেম্পল রোডের দুপাশে কম দামের চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চির এসব দোকান রয়েছে সারি সারি। বসে আছেন দোকানীরা।
বিক্রেতারা জানান, সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেসে থাকা শিক্ষার্থী, মেসে থাকা চাকরিজীবী, কোচিং সেন্টারের মালিক এবং নিম্ন আয়ের মানুষ এসব দোকানের ক্রেতা।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সরকারি বগুড়া কলেজে সীমিত হোস্টেল থাকায় এবং প্রায় শতাধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হোস্টেল না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে নির্ভর করতে হয় বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানার মেসের উপর। তারাই এসবের বেশি ক্রেতা।
আগে এসব আসবাবপত্রের দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকলেও এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। দোকানদাররা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ ব্যাবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
“এক বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও তারা মেসে সিট নেয়নি। তাই এসব ফার্নিচারের এই বাজারেও আসছে না। আবার যারা কিনেছে তারা মেসে থাকছে না। বাড়িতে চলে গেছে।”
ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ জানিয়ে তিনি বলেন, “কী করে চলব এখন? টেম্পল রোডে প্রায় বিশ জন দোকানদার ছিল। অনেকেই মহাজনের পাওনা এবং এনজিওর কিস্তির ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এই ব্যাবসা করে নিজের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এর উপর মহাজনের পাওনাতো আছেই।”
করোনাকালে কখনও লকডাউন, কখনও খোলা থাকলে অন্যসব দোকানে ক্রেতারা ভিড় করলেও তাদের এখানে কেউ আসে না বলে জানান আনোয়ার।
“করোনার এক বছরে যে অবস্হায় পড়েছি এমন মন্দায় কখনও পড়িনি। আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এখন দেড় হাজার টাকা বিক্রি করাই কঠিন।”
মহাজনের বকেয়া এবং দুটি এনজিও কিস্তি শোধ করতে পারছেন না বলে জানান সারোয়ার।
দোকানদার ভবানী বলেন, চেয়ার তিনশ, টেবিল চারশ, চৌকি ছয়শ টাকা করে বিক্রি হয়। এত কম দামে আর বগুড়ার কোথাও এসব পাওয়া যায় না। তাই শুধু শিক্ষার্থী, কোচিং সেন্টার কিংবা অবিবাহিত চাকরিজীবীরাই নয়, অন্য জেলা কিংবা উপজেলা থেকে আসা রিকশা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষরাই এসবের ক্রেতা।
করোনাকালে নুতন করে ওইসব লোক আর শহরে আসছে না; তাই ক্রেতাও প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসতে শুরু করছে বলে জানান তিনি।