বান্দরবানে পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসব স্থগিত

করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের কারণে বান্দরবানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ ‘বৈসাবি’ উৎসব এবার হচ্ছে না।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2021, 02:41 PM
Updated : 12 April 2021, 02:41 PM

তবে ঘরোয়াভাবে আনুষ্ঠানিকতায় কোনো বাধা নেই বলে অনুষ্ঠান আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গাদের পক্ষে দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে সোমবার এই বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।  

বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা সোমবার পরিষদের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাইয়ের সকল অনুষ্ঠান মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির স্বার্থে এই জেলার মারমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সাংগ্রাই উৎসবের সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’’

ফুল বিঝুর দিনে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসানো হয়

ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ স্নান করা হবে; তবে জনসমাগম করা যাবে না বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্ল এ মং মারমা বলেন, বর্ষবরণের সকল আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সোম ও মঙ্গলবার দুদিন জেলার সকল এলাকায় মাইকিং করে জানানো হবে।

এতে আরও বক্তব্য দেন পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের জেলা মহাসচিব তেজপ্রিয় থের, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেএসমং মারমা, উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংথোয়াইচিং মারমা ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু।

পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই ও চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিজুকে একসঙ্গে বলা হয় ‘বৈসাবি’।

ফুল বিঝুর দিনে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসানো হয়

পাহাড়ে ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী সামাজিক ও ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতায় পৃথক আচরণে এই বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে।

এই উৎসব ঘিরে পাহাড়িরা বিভিন্ন রকম ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলেন ঘরদোর। নানান সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে।

চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় ১২ এপ্রিল ফুলবিঝু নামে। এই দিনে ফুল সংগ্রহ করে নদীতে ভাসিয়ে ফুল উৎসব করেন তারা। এরপর শুরু হয় নতুন পোষাকে ঘুরে বেড়ানো। আর ঘরে ঘরে আয়োজন চলে অনেক সবজি দিয়ে ‘পাঁচন’ রান্না।

চাকমাদের বিঝু উজ্জাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিকেতন চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার বিজুর কোনো আনুষ্ঠানিকতা হবে না। শুধু বাড়িঘরে খাবার-দাবারসহ ঘরোয়া অনুষ্ঠান হবে।

তঞ্চঙ্গা জাতীয় গিলা খেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গাও এ বছর বিজু উৎসব হবে না বলে জানিয়েছেন।

ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত ত্রিপুরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত বছর থেকে ‘বৈসুক’ হচ্ছে না।

“এবারও হবে না। তবে ব্যক্তিগতভাবে খাওয়াদাওয়া করা যাবে বলে পাড়াবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”