মহামারী মুক্তির প্রার্থনায় কাপ্তাই হ্রদে বৈসাবির ফুল

করোনাভাইরাস মহামারীর ভয়াবহতায় বিপন্ন পৃথিবী। বিধিনিষেধের বেড়াজালে গত বছরের মত এবারও ঘটা করে উদযাপন করা হচ্ছে না পাহাড়ি জনপদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি।

ফজলে এলাহী রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2021, 10:25 AM
Updated : 12 April 2021, 01:15 PM

পাহাড়বাসী এবার তাই মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনায় অনাড়ম্বর আয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে ভাসিয়েছেন বৈসাবির ফুল।

বৈসাবি উপলক্ষে সোমবার প্রত্যুষে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসাতে আসা নারীরা ছিলেন ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে।

প্রথা অনুসারে সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন ঘাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা এই ফুল ভাসান।

রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি ঘাটে সোমবার প্রত্যুষে বৈসাবির ফুল ভাসান পাহাড়িরা।

বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে আনুষ্ঠানিকতা ছিল নি। এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হলেও হঠাৎ সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়া সব আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে। যে যার মত বাড়ির আশপাশে হ্রদের জলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল ভাসাচ্ছে। সব হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। পানিতে ফুল ভাসিয়ে মহামারি থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর প্রার্থনা করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।

রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি ঘাটে সোমবার প্রত্যুষে বৈসাবির ফুল ভাসান পাহাড়িরা।

পাহাড়বাসী সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন। সব ছাপিয়ে যায় বর্ষবিদায়ের এই উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু—এমন বিভিন্ন নামে আলাদাভাবে উদযাপন করেন তারা এই উৎসব।

রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি ঘাটে সোমবার প্রত্যুষে বৈসাবির ফুল ভাসান পাহাড়িরা।

১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির পর থেকে বৈসুকের ‘বৈ’, সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে উদযাপন করা হয়।

রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদে বৈসাবির ফুল ভাসাতে এসেছিল এই চাকমা শিশুটিও।

হ্রদের রাজবাড়িঘাটে ফুল ভাসাতে আসা অমৃতা চাকমা বলেন, “এটি পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছি গঙ্গা দেবীর কাছে। প্রার্থনা করেছি আমরা যেন আগামী বছর সুন্দর করে বরাবরের মত উৎসবটি করতে পারি।”

বৈসাবি উপলক্ষে রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে মহামারি থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর প্রার্থনা করেন পাহাড়িরা।

রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি ঘাটে সোমবার প্রত্যুষে বৈসাবির ফুল ভাসান পাহাড়িরা।

“ফুল ভাসনোর মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ-বেদনা ভাসিয়ে দিলাম। নতুন বছর যেন অনেক সুন্দর হোক এবং করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ব দ্রুত মুক্ত হোক। আমরা সবাই আবার যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি সেই কামনা করছি,” বললেন ফুল ভাসাতে আসা অভিরূপা চাকমা নামে এক নারী।