সালথা তাণ্ডব: আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার অব্যাহত

ফরিদপুরের সালথায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতার ঘটনায় চার হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2021, 01:37 PM
Updated : 7 April 2021, 02:11 PM

বুধবার সকাল ৮টার দিকে সালথা থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলায়

আসামি হিসেবে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিদের পরিচয় অজ্ঞাত।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

“মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।”

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন, উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামের ক্বারী ইনছুর শেখের ছেলে মো. নুরু শেখ (১৮), বিনোকদিয়া গ্রামের করিম কাজীর ছেলে মো. সজিব কাজী (১৯), ইউসুফদিয়া গ্রামের শাহজাহান মাতুব্বরের ছেলে রাব্বি মাতুব্বর (১৯), মিনাজদিয়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. ইউনুস মাতুব্বর (৬০), গোপালিয়া গ্রামের সালাম মোল্যার ছেলে আমির মোল্যা (৩০)।

ফুকরা গ্রামের গ্রামের সুলতান শেখের ছেলে আবুল কালাম শেখ (৩৫), রিপন শেখ (৩২), ইসরাইল মোল্যার ছেলে ইলিয়াস মোল্যা (২৭), চিলারকান্দা গ্রামের খালেক শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (৩২), পিসনাইল গ্রামের গ্রামের ঝিলু ফকিরের ছেলে মো. রুবেল ফকির (২৫), সোনাপুর গ্রামের মিজানুর শেখের ছেলে মো. রাকিবুল ইসলাম (১৮) ও বিনোকদিয়া গ্রামের আইয়ুব মোল্যার ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (১৮)।

এছাড়া গ্রেপ্তার দেখানো তাণ্ডবের সময় আহত উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আব্দুর রব মোল্যার ছেলে মিরান মোল্যা (৩৫) বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া।

গত সোমবার করোনাভাইরাসের মহামারী রোধে সরকারি তৎপরতার মধ্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটির জেরে এ হামলার শুরু। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত এবং দুই মাওলানাকে গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাংচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেয়।

সেদিনের তাণ্ডবের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। তাদের মধ্যে এর আগে জুবায়ের হোসেন (২৫) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

সালথার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ কর্মকর্তাদের বাসভবনে চালানো এসব ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলী এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম মোল্লাকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, গত সোমবার রাতের তাণ্ডবের কথা কেউ ভুলতে পারছে না। সবার মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, সালথা এলাকা এমনিতেই দাঙ্গাপ্রবণ। তারপরও এ ধরণের ভয়াবহ তাণ্ডব এই প্রথম দেখল সালথাবাসী। এ কারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

এ ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবির দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি।