সালথায় হামলা গুজব ছড়িয়ে, ভাষ্য স্থানীয়দের

দেশের বিভিন্ন স্থানের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার মতো ফরিদপুরের সালথার হামলার আগেও গুজব ছড়ানো হয়েছিল বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2021, 04:21 PM
Updated : 6 April 2021, 04:34 PM

তারা বলছেন, কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন থেকে ফেইসবুক লাইভে পুলিশের গুলিতে কয়েকজনের মৃত্যু ও মাওলানাকে গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র, মুসল্লি ও জনতাকে জড়ো করা হয়েছিল উপজেলা চত্বরে।

সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাংচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।

“পুলিশের গুলিতে মৃত্যু ও জনৈক মাওলানাকে গ্রেপ্তারের পর তাকে মারপিট করা হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে।”

সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, “গুজব ছড়িয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে।”

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, “ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। হামলার ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”

হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা থেকে পুলিশ যায়। র‌্যাব ও আনসার সদস্যরাও ছিল সেখানে।

সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি রামকান্তপুর গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।

ঘটনার পরদিন সালথা উপজেলা সদরে গিয়ে দেখা যায় পরিস্থিতি থমথমে। উপজেলা সদরের বাতাসে পোড়া গন্ধ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কাচ আর আসবাবপত্রের টুকরা।

বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকলেও মানুষ রয়েছে আতঙ্কে।

স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, “তাণ্ডবের কথা কেউ ভুলতে পারছে না। সবার মাঝেই আতঙ্ক। যদিও বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরেও আতঙ্কে রয়েছি আমরা।”

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সালথা এলাকা এমনিতেই দাঙ্গাপ্রবণ। তারপরও এধরনের তাণ্ডব এই প্রথম দেখলো সালথাবাসী। একারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে।”

উপজেলা আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার সালথা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

সমাবেশে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপির ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সারাদেশে সহিংসতা করছে।

“এরই ধারাবাহিকতায় সালথায়ও তারা হামলা চালিয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।”

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফারুক উজ্জামান ফকির মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী সাব্বির আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও সংসদ উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব মো. শফি উদ্দীন, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান বাবু সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।